চিকিৎসক-সংকটে ভোগান্তি

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ছত্রকান্দা গ্রামের গৃহবধূ সালমা খাতুন সম্প্রতি যমজ সন্তানের জন্ম দেন। শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যাসহ অন্যান্য জটিলতা দেখা দেওয়ায় বাচ্চা দুটিকে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের নবজাতক শিশুর বিশেষ সেবা ইউনিটে (স্ক্যানু) ভর্তি করা হয়। কিন্তু শয্যা-সংকটের কারণে দুই নবজাতককে একটি শয্যায় রাখা হয়।
সালমা বেগমের স্বামী মোশারফ হোসেন বলেন, শয্যার অভাব, তাই একটি শয্যায় দুই সন্তানের সেবা নিতে হচ্ছে।
সেবা নিতে আসা মা ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শয্যা-সংকটের কারণে হাসপাতালের এ ইউনিটে অনেক নবজাতককে ভর্তি করানো যাচ্ছে না। পাশাপাশি চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। নেই পর্যাপ্ত নার্সও। চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ইউনিসেফের সহায়তায় ২০১৫ সালের নভেম্বরে নবজাতকের (২৮ দিন পর্যন্ত) সেবা দিতে হাসপাতালে স্ক্যানু কার্যক্রম শুরু হয়। এই ইউনিটের জন্য তিনটি কক্ষে ৩২টি শয্যা রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৫৮টি, কর্মরত আছেন মাত্র ১৬ জন। এর মধ্যে শিশু বিভাগে চিকিৎসকের চারটি পদে কর্মরত আছেন দুজন। বিশেষ ইউনিটের জন্য আলাদা পদ সৃষ্টি করা হয়নি। শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসকেরাই সেখানে সেবা দেন।
৯ জানুয়ারি সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, স্ক্যানুর তিনটি কক্ষ বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। মা ও তাঁদের স্বজনেরা নবজাতকদের কোলে নিয়ে চিকিৎসকের অপেক্ষায় আছেন। কেউ মেঝেতে বসে আছেন, আবার কেউ আছেন দাঁড়িয়ে। কোনো কোনো শয্যায় দুটি নবজাতককে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
কথা হয় গলাচিপা উপজেলার গোলখালী গ্রামের আকিনুর বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, স্থানীয় একটি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর বোন রহিমা বেগমের যমজ বাচ্চা হয়েছে। নবজাতকের ওজন অনেক কম হওয়ায় সেবা নিতে এখানে এসেছেন। শয্যা না পাওয়ায় পাঁচ দিন ধরে সকালে নবজাতকদের নিয়ে আসেন এবং পরে ক্লিনিকে মায়ের কাছে নিয়ে যান। চিকিৎসকের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।
জ্যেষ্ঠ নার্স জাহানারা সিকদার বলেন, শুরুতে ইউনিটটি একজন চিকিৎসক ও একজন নার্স দিয়ে চলছিল। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে তিনজন নার্স দেওয়া হয়েছে। শয্যাসংখ্যার চেয়ে দ্বিগুণ এমনকি তিন গুণ নবজাতককে সেবা দিতে হয়। নবজাতকেরা একটু সুস্থ হলেই অন্য ওয়ার্ডে মায়ের কাছে পাঠানো হয়। এ ছাড়া স্বজনেরা সকালে নবজাতকদের এখানে নিয়ে আসেন, সেবা দেওয়ার পর আবার মায়ের কাছে নিয়ে যান।
হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট (শিশু) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই ইউনিটে সেবা নিতে আসা নবজাতকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসকদেরই ওই ইউনিটে সেবা দিতে হচ্ছে। চিকিৎসক-সংকটের কারণে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) চিকিৎসক হোসাইন আহমেদ বলেন, শয্যার চেয়েও বড় সংকট চিকিৎসকের। এমনিতেই এই হাসপাতালে চিকিৎসক-সংকট চলছে। তার ওপর স্ক্যানু পরিচালনার জন্য চিকিৎসকের কোনো পদ সৃষ্টি হয়নি। হাসপাতালের একজন ও সংযুক্তিতে থাকা একজন শিশু বিশেষজ্ঞ শিশু ওয়ার্ড, গাইনি ও কেবিনে শিশুদের সেবা দিচ্ছেন। একই সঙ্গে তাঁরা স্ক্যানুতেও নবজাতকদের সেবা দিচ্ছেন। চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়াতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।