জন্মস্থানে অবহেলায় আসাদের স্মৃতি

আজ শুক্রবার শহীদ আসাদ দিবস। ১৯৬৯ সালের এই দিনে স্বৈরাচারী আইয়ুববিরোধী গণ-আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন এ ছাত্রনেতা।
আসাদের পুরো নাম আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। মৃত্যুর পর গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামে তাঁকে সমাহিত করা হয়। সেখানে তাঁর নিকটাত্মীয়দের কেউ থাকেন না। তাঁর কবরটি এখন অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, নিজ বাড়ির বকুলতলায় শহীদ আসাদের কবর। এর কাছে ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, শিবপুরে আসাদের নামে একটি কলেজ থাকায় সাধারণ মানুষের কাছে নামটি পরিচিত। তবে তাঁকে নিয়ে যে একটি দিবস রয়েছে, তা বেশির ভাগ মানুষের অজানা। আসাদ দিবসে এবার শিবপুরে কোনো আয়োজন নেই। এমনকি শহীদ আসাদ কলেজেও উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি নেই।
শিবপুর সরকারি শহীদ আসাদ কলেজের অধ্যক্ষ সেলিনা বেগম বলেন, শিবপুরে দিন দিন আসাদ দিবস গুরুত্ব হারাচ্ছে। বড় কোনো ফোরামে এ নিয়ে আলোচনা না থাকায় নতুন প্রজন্মের কাছে আসাদের লড়াই, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ অজানা থেকে যাচ্ছে। আজ সকালে আসাদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করার পরিকল্পনা আছে।
আসাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) ঢাকা হল শাখার সভাপতি ছিলেন। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি স্বৈরাচারী আইয়ুব খান সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি। এরপর থেকে দিনটি শহীদ আসাদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
ধানুয়া গ্রামের কৃষক শওকত মিয়া (৬৫) বলেন, ‘আসাদকে চিনতাম, জানতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য হইল আসাদ কেডা আমরার ছেলে-মেয়েরা তা জানে না।’ এর জন্য তিনি রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামাজিক নেতাদের উদাসীনতাকে দায়ী মনে করেন।
রাজপথে আসাদের আন্দোলনের সঙ্গী ও শিবপুর সরকারি শহীদ আসাদ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবদুল মান্নান খান বলেন, ‘আসাদের আত্মত্যাগ শুধু উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে সীমাবদ্ধ থাকেনি, পরে তা স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয়। অথচ উপজেলাবাসী আসাদকে ভুলতে বসেছি। এটা লজ্জার।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মৃধা বলেন, ‘নানা কারণে নিজ এলাকায় আমরা আসাদকে বাঁচিয়ে রাখতে পারছি না। দিবসটিতে বড় কোনো আয়োজন করতে পারছি না। তবে আজ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুল নিয়ে আসাদের কবরে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’
আসাদের পরিবার সূত্র জানায়, দিবসটি উপলক্ষে শহীদ আসাদ পরিষদ আজ সকাল সাড়ে আটটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় জমায়েত, প্রভাতফেরি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেটসংলগ্ন শহীদ আসাদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং আসাদের স্বপ্ন শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে শপথ, বেলা তিনটায় স্বাধীনতা উদ্যানের শিখা চিরন্তন চত্বরে আলোচনা ও গণসংগীতের আয়োজন করেছে। বেলা ১১টায় ধানুয়ায় আসাদের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও ফাতিহা পাঠ হবে।
শহীদ আসাদের বড় ভাই এফ এম রশীদুজ্জামান ঢাকায় থাকেন। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘আসাদকে নিয়ে যতটা আলোচনা হওয়া দরকার, তা হচ্ছে না। ওকে নিয়ে আলোচনা হলে নতুন প্রজন্ম উপকৃত হতো।’