চট্টগ্রামের পাঁচ 'হুজি জঙ্গি' একিউআইএসের সদস্য?

দেড় মাস আগে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা পাঁচ যুবক ‘একিউআইএসের সক্রিয় সদস্য’ বলে এ ঘটনায় করা তিনটি মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছে র্যাব। অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের তিনটি পৃথক মামলায় গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন র্যা বের তদন্ত কর্মকর্তারা। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা একিউআইএস নামে পরিচিত।
অভিযোগপত্রভুক্ত পাঁচ আসামি হলেন ফরিদপুরের মাওলানা মো. তাজুল ইসলাম, যশোরের মো. নাজিমউদ্দিন, ঝিনাইদহের আবুজার গিফারী, নীলফামারীর নুরে আলম ও রংপুরের শেখ ইফতিশাম আহমেদ। অবশ্য গ্রেপ্তারের পর গত ৮ ডিসেম্বর র্যা ব সাংবাদিকদের বলেছিল, পাঁচজনই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) সদস্য। পরে ১২ ডিসেম্বর রিমান্ড শুনানির সময় আদালতের কাছে পাঁচ যুবক অভিযোগ করেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করা নিয়ে র্যাব যে অভিযানের কথা বলেছে, তা সাজানো নাটক। তাঁরা দাবি করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে সাদাপোশাকধারী লোকজন ছয় মাস থেকে এক বছর আগে তাঁদের তুলে নিয়ে যায়।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরের এ কে খান মোড় ও উত্তর কাট্টলী এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, বোমা, বিস্ফোরকসহ ‘হুজির’ পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র্যা ব। এ ঘটনায় র্যাব-৭ চট্টগ্রামের উপসহকারী পরিচালক এম জি রাব্বানী বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে নগরের আকবর শাহ থানায় অস্ত্র আইনে দুটি, বিস্ফোরক ও সন্ত্রাস দমন আইনে একটি করে চারটি মামলা করেন। প্রথমে মামলাগুলো আকবর শাহ থানার পুলিশ তদন্ত করে। পরে র্যাব তদন্ত করে। এ কে খান মোড় থেকে অস্ত্র উদ্ধারের মামলায় র্যা ব-৭-এর কর্মকর্তা এসআই এ কে মানিক দুজনকে আসামি (তাজুল ও নাজিম) করে এবং কাট্টলী এলাকায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের দুটি মামলায় পাঁচজনকে আসামি করে এসআই রাশেদুল ইসলাম অভিযোগপত্র দেন।
এ বিষয়ে র্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার পাঁচজন জঙ্গি। গ্রেপ্তারের পর তাঁরা প্রাথমিকভাবে তাঁদের হুজি সদস্য বলা হলেও তদন্তে জানা গেছে, তাঁরা আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্টের সদস্য। র্যা বের কাছে এ-সংক্রান্ত যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। তিনি বলেন, অস্ত্র ও বিস্ফোরক
মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও সন্ত্রাস দমন আইনের মামলার তদন্ত চলছে। সেটিতে তাঁদের সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে।
আদালত সূত্র জানায়, তিনটি অভিযোগপত্রেই গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের একিউআইএসের সক্রিয় সদস্য বলা হয়েছে। তাঁরা ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করতেন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ফেসবুক ও ফ্রেন্ড লিস্টে সার্চ করে ঢুকে দেখা যায় যে তাঁরা অপরাপর একিউআইএস জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য এবং তাঁদের একিউআইএসের (আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট) অন্য সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।’
তদন্তে পাঁচ আসামির সঙ্গে আরও সাতজন জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে র্যাব। তবে তাদের নাম পেলেও ঠিকানা পাওয়া যায়নি। যে কারণে অভিযোগপত্রে তাদের আসামি করা হয়নি।
এদিকে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, র্যাবের দেওয়া তিন মামলার অভিযোগপত্রগুলো গ্রহণের শুনানির জন্য এখনো তারিখ নির্ধারণ করেননি আদালত।