বালাগঞ্জে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার কাজে সমঝোতা!

সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায় ২ কোটি ৭০ লাখ ৪৪ হাজার টাকায় ১৩টি কালভার্ট নির্মাণের জন্য আহ্বান করা দরপত্রের কাজ ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল সোমবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে লটারির মাধ্যমে সমঝোতা করে এসব কাজ ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেওয়া হয়। এ বিষয়ে কাজ না পাওয়া কয়েকজন ঠিকাদার গতকালই ইউএনওর কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন।
পাঁচজন ঠিকাদার বলেন, ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ১৩টি কালভার্ট নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এ কাজের জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় গত ডিসেম্বর মাসে দরপত্র আহ্বান করে। এরপর একেকটি কাজের বিপরীতে ৩০ থেকে ৩৫টি করে দরপত্র জমা পড়ে।
দরপত্রে অংশ নেওয়া সিলেট নগরের বাগবাড়ি এলাকার মেসার্স তৈয়বুর রহমান নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক তৈয়বুর রহমান অভিযোগ করেন, প্রচলিত নিয়মানুযায়ী অন্তত দুই দিন আগে ঠিকাদারদের লটারির বিষয়টি জানানোর কথা। কিন্তু গতকাল সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে খুদে বার্তার মাধ্যমে তাঁকে লটারির বিষয়টি জানানো হয়। সিলেট থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার দূরত্বের বালাগঞ্জ উপজেলায় এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে তাঁদের যাওয়াটা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না।
সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকার মেসার্স লিখনী প্রতিষ্ঠানের মালিক বদরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি খুদে বার্তার মাধ্যমে লটারির বিষয়টি সকাল ৯টা ১৭ মিনিটে জানতে পারি। মূলত সিলেট থেকে যাঁরা টেন্ডারে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের অনুপস্থিতিতে পছন্দ অনুযায়ী কিছু ব্যক্তিকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্যই এটি করা হয়েছে।’
ঠিকাদারেরা অভিযোগ করেন, ১৩টি প্রকল্পের মধ্যে একেকটি প্রকল্পে ৩০ থেকে ৩৫ জন করে ঠিকাদার দরপত্র জমা দিয়েছেন। এ অবস্থায় মাত্র কয়েকজনকে নিয়ে লটারি করাটা রহস্যজনক। এ ছাড়া লটারি কবে অনুষ্ঠিত হবে, সেটি জানতে গত রোববারও পিআইওর সঙ্গে সিলেটের কয়েকজন ঠিকাদার যোগাযোগ করলে তখন তাঁদের তারিখ ও সময় ওই কর্মকর্তা নিশ্চিত করতে পারেননি।
দরপত্রে অংশ নেওয়া কয়েকজন ঠিকাদার বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান ঠিকাদারি কাজ পেয়েছে, এর মধ্যে মেসার্স লুতফুর রহমান নামের প্রতিষ্ঠানটির মালিক জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি লুতফুর রহমান, মেসার্স শাওন ট্রেডার্সের মালিক চঞ্চল পাল সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক এবং মাহফুজ ট্রেডার্সের মালিক বালাগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ফারুক আহমদ।
মাহফুজ ট্রেড্রাসের মালিক ফারুক আহমদ বলেন, লটারিতে কোনো ধরনের অস্বচ্ছতা হয়নি। ঠিকাদারদের সামনে প্রকাশ্যে লটারি-প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। যাঁরা লটারিতে কাজ পাননি, তাঁরাই বিষয়টিকে বিতর্কিত করতে মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বালাগঞ্জের পিআইও হাবিবুর রহমানের মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে এ বিষয়ে দরপত্র কমিটির সভাপতি ইউএনও এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘লটারির বিষয়টি প্রকল্প কর্মকর্তা কখন ঠিকাদারদের অবহিত করেছেন, সেটি আমার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে প্রকল্প কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করব। তবে লটারি অত্যন্ত স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে হয়েছে। প্রচুর ঠিকাদার ও মানুষের সামনে লটারি-প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এরপরও কোনো অভিযোগ থাকলে পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’