আরও দুই মাস শ্রেণিকক্ষে বন্দী থাকতে হবে ওদের?

বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে আছে সেতু নির্মাণের সামগ্রী ও সরঞ্জাম। বিদ্যালয়ে এসেই শিশুদের শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পড়তে হয়। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশনসহ সব কাজই সেখানে। স্কুলমাঠে নামতে গেলেই ঠিকাদারের লোকজনের তাড়া।

দুই মাস ধরে এই অবস্থা চলছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নাটোপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় দেড় শ শিক্ষার্থীর। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, আরও অন্তত দুই মাসের আগে তারা ওই নির্মাণসামগ্রী ও সরঞ্জাম স্কুলমাঠ থেকে সরাতে পারবে না।

গতকাল সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নাটোপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনটি ভবনের মধ্যে দুই কক্ষের একটি ব্যবহার করছেন ঠিকাদারের লোকজন। স্কুলের মাঠজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে লোহার রড। ইটের খোয়া ও বালুর স্তূপ রাখা হয়েছে ভবন ঘেঁষে। আছে লোহা কাটার এবং খোয়া মেশানোর মেশিনও।

সকাল সাড়ে নয়টায় বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির কক্ষের ভেতরে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হলো। কারণ জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শামীম হোসেন বললেন, মাঠে নামার উপায় না থাকায় এখন প্রতিদিনই এভাবে শ্রেণিকক্ষে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। তিনি বলেন, বিদ্যালয়টি ফটকী নদীর পারে অবস্থিত। এ নদীর ওপর দুই মাস আগে একটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। নির্মাণের সব মালামাল রাখা হয়েছে স্কুলমাঠে।

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, মালামাল রাখার কারণে বিদ্যালয়ে বর্তমানে পাঠদানসহ সার্বিক কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত হচ্ছে। আগে স্কুলমাঠে নিয়মিত জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হতো; এখন হচ্ছে না। ছেলেমেয়েরা স্কুলের বারান্দা থেকে নামতে পারছে না। কারণ, স্কুলমাঠ ইট-পাথর আর লোহালক্কড়ে ভরা। রয়েছে লোহা কাটা ও সিমেন্ট-পাথর মেশানোর মেশিনের ঘড়ঘড় শব্দ। রড পেটানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই অবস্থায় শিশুরা স্কুলে এসে কক্ষে প্রবেশ করে আর বাইরে বের হতে পারে না। কেউ মাঠে যাওয়ার চেষ্টা করলে ঠিকাদারের লোকজন তাড়া দেন।

জানতে চাইলে সেতু নির্মাণকাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনিক কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপক আবদুল জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি কাজ হচ্ছে, আর স্কুলটিও সরকারি। এ কারণে তাঁরা সেখানে মালামাল রেখেছেন। গ্রামের লোকজন সেগুলো রাখার অনুমতি দিয়েছে। তিনি বলেন, আগামী দুই মাস পর তাঁরা স্কুলমাঠ ছেড়ে দিতে পারবেন।

তবে কার্যাদেশ অনুযায়ী, ওই সেতু নির্মাণকাজ শেষ হবে আগামী জুন মাসে। ঠিকাদারের ঝুলিয়ে দেওয়া সাইনবোর্ডেও সে কথাই লেখা আছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বজলুর রহমান মোল্লা বলেন, সেতুটিও গ্রামের মানুষের জন্য জরুরি। তাই তারা জোর দিয়ে কিছু বলতে পারেনি। তবে ছেলেমেয়েদের সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সালমা বেগম বলেন, বিষয়টি নিয়ে এলাকার মানুষের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন। তিনি বলেন, এভাবে স্কুলমাঠে নির্মাণসামগ্রী রাখা ঠিক নয়। তারপরও কেন রাখা হয়েছে, বিষয়টি তিনি দেখবেন।