জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে সন্দেহে নোয়াখালী থেকে দুই শিক্ষার্থী আটক

জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে—এমন সন্দেহে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থেকে দুই শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করেছে বলে তাদের পরিবার অভিযোগ করেছে। গত রোববার রাতে উপজেলার বসুরহাট পৌরসভা এবং চরকাঁকড়া ইউনিয়নের গ্রামের বাড়ি থেকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা দুই শিক্ষার্থীকে আটক করেন। এর মধ্যে একজন ঢাকার উত্তরা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী অন্যজন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ দুজনকে আটক করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ ফজলে রাব্বী। তিনি বলেন, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক শওকত আলী সরকারের নেতৃত্বে একটি দল রোববার থানায় এসে দুই ছাত্রকে আটক করার বিষয়ে তাঁদের সহায়তা চান। সে অনুযায়ী তাঁদের সহায়তা দেওয়া হয়।
ওসি বলেন, আটক দুই শিক্ষার্থী হলেন উত্তরা ইউনিভার্সিটির সিএসটিই বিভাগের আমজাদুল ইসলাম (২৩) ও বসুরহাট এ এইচ সি সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী আবু আবদুল্লাহ (১৫)। রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা দুজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। এ সময় তিনি আটক দুজনের নাম-ঠিকানা লিখে রাখেন। পরে রাত প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে ইউনিটের সদস্যরা দুজনকে ঢাকায় নিয়ে যান। দুজনকেই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার সন্দেহে আটক করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য তাঁর জানা নেই।
আমজাদুল বসুরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইতালিপ্রবাসী নাছির আহমেদের ছেলে। আবু আবদুল্লাহ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সারওয়ার হোসেনের ছেলে। তার বাবা ঢাকায় জনশক্তি রপ্তানির ব্যবসা করেন।
এদিকে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও এসএসসি পরীক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার খবর জানাজানি হওয়ার পর গতকাল দুপুরে এলাকার লোকজন তাঁদের বাড়িতে যান। আমজাদুলের বাড়িতে কথা হয় তাঁর বড় ভাই ওষুধ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছোট ভাই কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নয়। তবে পিস টিভির জাকির নায়েকের ভক্ত। প্রায়ই তাঁর বক্তব্য শুনত। কিন্তু তাঁর ভাইয়ের মধ্যে কখনো উগ্রতা দেখেননি তাঁরা।
সাইফুল ইসলাম বলেন, রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা থেকে আসা পুলিশের একটি দল তাঁদের বাড়ি থেকে আমজাদুলকে আটক করে নিয়ে যায়। এক ব্যক্তির নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে তথ্য উদ্ধারের জন্য আমজাদুলকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে তাঁদের জানানো হয়। অভিযানে নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তার সঙ্গে গতকাল মুঠোফোনে তিনি যোগাযোগ করেন। কিন্তু ঢাকায় আসার প্রয়োজন নেই বলে তাঁকে জানানো হয়।
অপরদিকে গতকাল দুপুরে চরকাঁকড়া ইউনিয়নে আবু আবদুল্লাহদের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মা কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘরে ছিলেন তার নানি নূর জাহান বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর নাতি এসএসসি পরীক্ষা দেবে। মুঠোফোন নেই তার। মাঝেমধ্যে মায়ের ফোন ব্যবহার করত। জঙ্গিদের সঙ্গে তাঁর নাতির যোগাযোগ নেই বলে জানান তিনি।
চরকাঁকড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, আবু আবদুল্লাহদের পরিবার বর্তমানে যে বাড়িতে থাকে সেটি নানার বাড়ি। এই বাড়িতে থেকেই আবদুল্লাহ ও তার ছোট ভাই ওমর আবদুল্লাহ পড়ালেখা করে। এলাকায় ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের ছেলে হিসেবে তারা পরিচিত। এই বয়সের একটি ছেলে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ থাকতে পারে বলে তাঁরা বিশ্বাস করেন না।
বসুরহাট এ এইচ সি সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু জাফর মো. নুরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, আবু আবদুল্লাহকে ঢাকা থেকে আসা পুলিশের একটি দল আটক করে নিয়ে গেছে বলে তাঁরা শুনেছেন। পরিবারের কেউ বিষয়টি বিদ্যালয়ে জানায়নি।