সুজানগর পৌরসভা শুধু নামেই প্রথম শ্রেণির

পাবনার সুজানগর পৌরসভার অধিকাংশ সড়ক ভাঙাচোরা, নর্দমাব্যবস্থা (ড্রেনেজ) বেহাল, নেই সড়কবাতি, একমাত্র বাজারটির উন্নয়ন হয়নি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকাংশ পদও শূন্য। তাই নিয়মিত কর পরিশোধ করেও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পৌরবাসী। তবু প্রথম শ্রেণির মর্যাদা নিয়ে চলছে পৌরসভাটি।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে ১১ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের ১৩টি গ্রাম নিয়ে পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালে পৌরসভাটি দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। বর্তমানে পৌরসভার লোকসংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। এখানে ১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কাঁচা পণ্যের একটি বিশাল হাট, ৫৪টি ধর্মীয় উপাসনাকেন্দ্র, ৫৬ কিলোমিটার রাস্তা ও ১ হাজার ৭৭৬ কিলোমিটার নর্দমাব্যবস্থা রয়েছে।

পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হলেও নাগরিক সুবিধা বাড়াতে তেমন কোনো বরাদ্দ আসেনি। মোট রাস্তার ১৬ কিলোমিটার এখনো কাঁচা রয়েছে। দীর্ঘদিন মেরামত না করায় ভেঙে গেছে অধিকাংশ পাকা রাস্তা ও নর্দমাব্যবস্থা। ১৬০টি সড়কবাতি লাগানো হলেও চলছে মাত্র ৮ থেকে ১০টি। ২০১৪ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে পানির পাম্প বসানো হলেও তা চালু হয়নি। পৌরসভার প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তার দুটি পদের একটি, কর্মচারীর ১৩টি পদের ১২টি এখনো শূন্য। পূর্ত বিভাগে কর্মকর্তার ৪টি পদের ২টি ও ৩১টি কর্মচারী পদের ১৮টি শূন্য। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তার ২টি পদের ২টিই শূন্য এবং ১৭ জন কর্মচারীর মধ্যে আছেন ২ জন।

পৌর এলাকার অন্তত ৮-১০ জন বাসিন্দা বলেন, এলাকাটি কৃষিপ্রধান। দেশের পেঁয়াজ উৎপাদন এলাকাগুলোর মধ্যে সুজানগর একটি। ফলে উপজেলার উৎপাদিত পেঁয়াজের অধিকাংশ বিক্রি হয় পৌরসভার একমাত্র কাঁচাবাজারটিতে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কাঁচাবাজারটির উন্নয়ন না হওয়ায় সদরের প্রধান সড়কে পেঁয়াজসহ কাঁচা পণ্যের হাট বসানো হচ্ছে। এতে সড়কটিতে যানজট লেগেই থাকছে। এদিকে দীর্ঘদিন মেরামত না করায় অধিকাংশ নর্দমাব্যবস্থা ভেঙে গেছে। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। সড়কবাতিগুলো নষ্ট থাকায় সন্ধ্যা নামলে পৌরবাসীকে অন্ধকারে চালাচল করতে হচ্ছে। ঠিকমতো পরিচ্ছন্নতা অভিযান না চালানোর কারণে পাড়া-মহল্লায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পাবনা-সুজানগর সড়কের পাবনা সদর অংশ শেষ হয়ে কিছুটা এগোলেই সুজানগর পৌরসভা শুরু। প্রবেশ করতেই প্রথমে চোখে পড়ে ভাঙা সড়ক। সড়কটিতে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। রাস্তার দুপাশে এলোমেলোভাবে বসেছে অস্থায়ী দোকানপাট। সড়কের পাশের নর্দমা দিয়ে ময়লা-আবর্জনা যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। বাজার পার হয়ে আশপাশের এলাকাগুলো ঘুরেও মেলে একই চিত্র। মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। বাজারের ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, পৌর বাজারটি ইজারা দিয়ে পৌরসভা প্রায় ৪০ লাখ টাকা আদায় করছে, কিন্তু বাজারের উন্নয়ন হচ্ছে না। বৃষ্টি হলে বাজারটি পানি ও কাদায় পরিপূর্ণ থাকে।

চর মানিকদি গ্রামের আবদুল জব্বার বলেন, পৌরবাসী নিয়মিত কর পরিশোধ করলেও কোনো সুবিধাই পাচ্ছেন না। চর সুজানগর এলাকার শাহানাজ পারভীন বলেন, সন্ধ্যা হলে পুরো পৌর এলাকা ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে যায়। বাইরে বের হওয়ার উপায় থাকছে না। হাসপাতালপাড়ার বাসিন্দা নাজমা আক্তার বলেন, তিন বছর আগে পৌরসভা বাড়ি বাড়ি পানি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু এখনো বাড়িতে পানি পৌঁছায়নি।

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, কিছু সড়কে কাজ শুরু হয়েছে। তবে পানির পাম্প বসানো হলেও বিভিন্ন ত্রুটির কারণে পানি সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।

পৌরসভার মেয়র আবদুল ওহাব বলেন, ‘পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণির হলেও নিজস্ব আয় নেই বললেই চলে। এর মধ্যেই ১ কোটি ১ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি শিশুপার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। সড়কবাতি, নর্দমা ও বাজার উন্নয়নের জন্য প্রকল্প দিয়েছি। বরাদ্দ এলে সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।’