৯০টি যানবাহন ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

১৮-দলীয় জোটের অবরোধ চলার সময় গত রোববার রাত থেকে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ৬৫টি যানবাহন ভাঙচুর ও ২৫টিতে অগ্নিসংযোগ করেন অবরোধকারীরা। ময়মনসিংহ, গাজীপুর ও ঝিনাইদহে গতকাল অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। অবরোধকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নাটোরে অবরোধকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এসব ঘটনায় পুলিশসহ ৪৫ জন আহত হয়েছেন।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ: প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সদস্যরা জানান, দুপুরে ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়ায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফটকের সামনে অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। পরে অবরোধকারীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্রাক, টেম্পো ও অটোরিকশাসহ কমপক্ষে ১০টি যানবাহন ভাঙচুর করেন।
সকাল নয়টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সাহেব বাজার এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে পথচারীসহ ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হন।
এর আগে সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কবিরপুরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে চার পুলিশ সদস্যসহ ১৫ জন আহত হন।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে ইটপাটকেল ছোড়ার পর অগ্রণী ব্যাংকের শৈলকুপা শাখার কাচ ভাঙচুর শুরু করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ সাতটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষ: নাটোর সদর থানার পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় সদর উপজেলার হয়বতপুর এলাকায় নাটোর-ঢাকা মহাসড়কে সেনাবাহিনীর পাহারায় কয়েকটি ট্রাক নাটোরের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় অবরোধকারীরা পেছনের দুটি ট্রাক ভাঙচুর করেন। ওই সময় লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দলের নেতা-কর্মীরা অবরোধকারীদের বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে ১০ জন আহত হন।
অবরোধকারীরা হয়বতপুর বাজারে গ্রামীণফোনের একটি গ্রাহক সেবাকেন্দ্রসহ সাতটি দোকান ভাঙচুর ও স্থানীয় দুই আওয়ামী লীগ নেতার দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন।
যানবাহনে আগুন-ভাঙচুর: রোববার রাতে বগুড়ার ধুনট উপজেলার সরুগ্রামে অবরোধকারীরা মরিচবাহী একটি ট্রাক পুড়িয়ে দেন। গতকাল সকাল পৌনে ১০টায় ধুনট পৌরসভার হাসপাতাল মোড় এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা কয়েকটি ভটভটি ভাঙচুর করেন। দুটি স্থানেই পুলিশ অবরোধকারীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে ১০ নেতা-কর্মী আহত হন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা সকাল সাতটার দিকে সিলেট নগরের দর্শনদেউড়িতে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে একের পর এক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। তখন একটি ট্রাক ও সিএনজিচালিত ১০টি অটোরিকশায় ঢিল ছুড়ে ভাঙচুর করেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ও পাইকপাড়ায় রোববার রাত নয়টা থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যে অবরোধকারীরা গরুবোঝাই একটি ট্রাক ও একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন। দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের সীমান্তবাজারে সবজিবোঝাই একটি ট্রাক, রাত তিনটার দিকে রায়গঞ্জ উপজেলার ঘুরকা এলাকায় সার ও ছোলাবোঝাই দুটি ট্রাক, রয়হাটিতে এসএ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের একটি কাভার্ড ভ্যান ও একটি ট্রাক পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে অবরোধকারীরা বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার শ্যামবাগাত এলাকায় খুলনা-মংলা মহাসড়কে বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে ধানবোঝাই একটি ট্রাক আটকায়। তাঁরা ট্রাকচালক ও তাঁর সহকারীকে মারধর করে মুঠোফোনের দুটি সেট কেড়ে নেন। পরে পেট্রল দিয়ে ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেন।
আটক: র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর সদস্যরা রোববার রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলা থেকে জামায়াত-শিবিরের ২৪ জন ও বিএনপির আট নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেন। ওই ঘটনার প্রতিবাদে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা গতকাল মনোহরগঞ্জের বিহড়া সেতু এলাকায় মালবোঝাই চারটি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ ও কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেন। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল ওই এলাকায় যাওয়া মাত্র পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ইউসুফপুর এলাকায় নাশকতা করার সময় ছাত্রশিবিরের পাঁচ নেতা-কর্মীকে আটক করে স্থানীয় জনতা। যৌথ বাহিনীর সদস্যরা রোববার রাতে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় জামায়াত-শিবিরের ১৪ জন, রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় তিনজন ও নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেন। একই বাহিনী রোববার রাত থেকে গতকাল বেলা সোয়া ১২টা পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ সদর ও উল্লাপাড়া উপজেলায় বিএনপি ও জামায়াতের ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে।
রোববার রাতে পঞ্চগড় শহর থেকে জামায়াত ও যুবদলের তিনজন, নাটোর শহরে ছাত্রদলের তিন নেতা-কর্মী, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই রাত থেকে গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত পুলিশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপি-জামায়াতের ১৫ কর্মীকে আটক করে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ঢাকার বাইরে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা]