পাহাড়ি নীল চটক

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে গত ২২ নভেম্বর ছবিটি তুলেছেন রেঞ্জার মুনির আহমেদ খান
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে গত ২২ নভেম্বর ছবিটি তুলেছেন রেঞ্জার মুনির আহমেদ খান

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের বিট অফিসের সামনে বেশ কটি বড় সেগুনগাছ আছে। ওখানেই গত ২৮ এপ্রিল প্রথম দেখি বাজপাখিটি (Crested Goshawk)। এরপর আবার দেখি ৩ জুন বিট অফিসের ১৫০ গজ দূরে, সেগুনবাগানে।
গত ২২ নভেম্বর সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ঢাকা থেকে আসা জনৈক আলোকচিত্রীকে সঙ্গে নিয়ে উদ্যানের রেঞ্জার মুনির আহমেদ খান এবং তাঁর স্ত্রী বন্য প্রাণী আলোকচিত্রী তানিয়া খান বের হলেন নতুন পাখির সন্ধানে। সেগুনবাগানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখা হয়ে গেল সেই বাজপাখির সঙ্গে। যদিও আগে বেশ কবার ছবি তুলেছেন, তবু আরেকটি ভালো ছবির আশায় ওর পিছু নিলেন।
বাজের পিছু ছুটতে ছুটতে হঠাৎ তানিয়া খানের কানে এল, কেমন একটা অচেনা কিচিরমিচির শব্দ! মুনিরকে ইশারা করতেই সবাই চুপিসারে শব্দের উৎস খুঁজতে থাকলেন। কিছুক্ষণ খোঁজার পর তাঁরা ছোট এক নীল-হলদে পাখির সন্ধান পেলেন। সঙ্গে সঙ্গে ক্লিক-ক্লিক শব্দে বন-বাগান যেন কেঁপে উঠল। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও পাখিটি শনাক্ত করা গেল না। বেশ কিছুদিন পর মৌলভীবাজারে তাঁদের বাসায় ফিরে কম্পিউটারে ট্রান্সফার করে ভালো করে পরখ করলেন, কিন্তু শনাক্ত করতে পারলেন না। নতুন কোনো প্রজাতি নয়তো! দু-তিনটি ছবি আপলোড করলেন ফেসবুকে। বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মনিরুল হাসান খান পাখিটিকে পাহাড়ি নীল চটক (Hill Blue Flycatcher) বলে শনাক্ত করলেন। মনিরুল হাসানের সূত্রমতে, এ দেশে পাহাড়ি নীল চটকের এটিই প্রথম রেকর্ড।
পাহাড়ি নীল চটক বা নীল পাহাড়ি চটক Muscicapidae পরিবারের সদস্য। ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, লাওস, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া ও চীনে দেখা যায়।
পাখিটি দেখতে কতকটা টিকেলের নীল চটকের মতো, তবে আকারে প্রায় তিন সেন্টিমিটার বড়। ঠোঁটের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত লম্বায় ১৫ সেন্টিমিটার। টিকেলের তুলনায় ঠোঁট লম্বা। পুরুষের মাথা, পিঠ ও দেহের পার্শ্ব গাঢ় নীল। কান-ডাকনি কালো। স্ত্রীর দেহের ওপরটা বাদামি-ধূসর। পুরুষের লেজ নীল ও স্ত্রীরটি লালচে-বাদামি। উভয়েরই ঠোঁট কালো ও পা কমলাটে।
এরা বড়পাতাওয়ালা বৃক্ষযুক্ত গহিন বনের বাসিন্দা। বেশ দ্রুত ‘চিট্-চিট্, চিট্-চিট্, চিট্-চিট্,’ শব্দে সুমিষ্ট গান গায়। একাকী বা জোড়ায় থাকে। পাতার ছায়ার বসে থাকতে পছন্দ করে। পোকামাকড় প্রধান খাদ্য। কামনা করি, পাখিটি যেন এ দেশে নিয়মিতভাবে প্রতিবছরই আসে।