ভোটের মাত্র ১২ দিন বাকি, ইশতেহারের খবর নেই

বিরোধী দলবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের আগেই আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা ভাগাভাগির মাধ্যমে ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। বাকি ১৪৬ আসনে ভোট গ্রহণের আর মাত্র ১২ দিন বাকি। কিন্তু নির্বাচনের পর আবার সরকারে গিয়ে ভোটারদের জন্য কী কী করা হবে, সেই প্রতিশ্রুতিসংবলিত নির্বাচনী ইশতেহার এখন পর্যন্ত দেয়নি আওয়ামী লীগ।
এমনকি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বাকি দলগুলোও এবার ইশতেহারের বিষয়ে উদাসীন।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ইশতেহার ঘোষণা এবং এর পক্ষে জনমত তৈরির বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোযোগ নেই। আসন ভাগাভাগির নাটকীয় কর্মকাণ্ডের মধ্যে এ বিষয়টি আলোচনাতেই স্থান পায়নি।
অথচ ১৯৯০ সালের পর প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি দলের কাছেই ইশতেহার ঘোষণা নির্বাচনের একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্ব হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল।
আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ইশতেহার তৈরির জন্য দলে আলাদা একটি সেল আছে। অনেক দিন ধরেই এই সেল ইশতেহার তৈরিতে কাজ করছে। কিন্তু সেই ইশতেহার দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতে অনুমোদন নেওয়া হয়নি এখনো।
২০০৮ সালের নির্বাচনের ১৭ দিন আগে ইশতেহার ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ১১ ডিসেম্বর। পরদিন ১২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ ইশতেহার ঘোষণা করে। গত নির্বাচনের ‘দিনবদলের সনদ’ নাম দিয়ে ঘোষণা করা আওয়ামী লীগের ইশতেহার তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। পরিবর্তনের ডাক দিয়ে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে।
এবার এখনো ইশতেহার না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ইশতেহার তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ইশতেহার তৈরি হয়ে গেছে। শিগগিরই ঘোষণা করা হতে পারে। ইশতেহারে কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে যা যা করণীয়, সব বলা হয়েছে। এ ছাড়া রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের পথে যেসব কাজ বাকি আছে, সেগুলো কখন কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সেটি থাকছে।
আওয়ামী লীগের বাইরে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ও তরীকত ফেডারেশনও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেনি। এ নিয়ে এসব দলের কোনো গরজ নেই বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
ছোট কয়েকটি দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলেন, ইশতেহারের কথা তো মনেই ছিল না। আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হওয়ার পথে। আছি হরতাল-অবরোধ নিয়ে। আসলেই তো ইশতেহার দেওয়া উচিত ছিল। দেখি কী করা যায়।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার দূরে থাক, দলের প্রার্থীদের একটা বড় অংশই নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারেননি। ফলে তাঁদের যে ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতি, সেগুলোই ভোটাররা জানতে পারেননি। যেসব দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, সেগুলোর মধ্যেই একটা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভোটারদের টেনে আনার যে প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল, সেটিও মার খেয়ে যায় এইচ এম এরশাদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার কারণে। নিরাপত্তাহীনতায় অনেক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হতেই বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এর ফলে ভোটার, ভোটারের চাওয়া কিংবা তাঁদের প্রতি দায়বদ্ধতার বিষয়টি হারিয়ে গেছে।
১৪ দলের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এখনো নির্বাচনী ইশতেহার চূড়ান্ত করেনি। দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেননসহ দুই নেতা ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে নির্বাচিত। আরও বেশ কয়েকজন প্রার্থী তাদের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, শিগগিরই ইশতেহার ঘোষণা করা হবে।
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ দলের তিনজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। দলটিও নির্বাচনী ইশতেহার এখনো দেয়নি। জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘ইশতেহার তো দিতে হবেই। গতবার যেগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে সেগুলো বাদ দিয়ে নতুন ইশতেহার দেওয়া হবে।’