সিভিল অ্যাভিয়েশন, গণপূর্ত ও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে দুদক

আরও তিনটি সরকারি দপ্তরে গিয়ে সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেখানে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছে।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় দুদকের মহাপরিচালক মুনির চৌধুরীর নেতৃত্বে সংস্থার ছয় সদস্যের একটি দল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিভিল অ্যাভিয়েশন) দপ্তরে যায়। দলটি সংস্থার চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গণি চৌধুরীসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে।
সূত্র জানিয়েছে, দুদকের দলটি সিভিল অ্যাভিয়েশনের কর্মকর্তাদের কাছে দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা চায়। দুদকের কাজের প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় তথ্য ও নথিপত্র দ্রুত দিয়ে সহায়তার কথা বলেন দুদক কর্মকর্তারা। সিভিল অ্যাভিয়েশনের পক্ষ থেকে দুদককে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়।
একই সময়ে দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের নেতৃত্বে আরেকটি দল তেজগাঁওয়ের রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে যায়। সেখানে সেবাধর্মী ওই প্রতিষ্ঠানটির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। সেখানে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানান, দুদক দলটি আসার খবরে কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওই দপ্তরের কর্মকর্তাসহ অনেকে। দুদকের দলটি ভেতরে ঢোকার আগে বেশ কয়েকটি দামি গাড়ি তাঁদের নজরে আসে। তাঁরা জানতে চান ওই সব গাড়ির মালিক কারা। পরে দুদক কর্মকর্তারা ভেতরে যাওয়ার পরপরই গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়া হয় সেখান থেকে।
এদিকে দুদক পরিচালক কাজী শফিকুল আলমের নেতৃত্বে আরেকটি দল গণপূর্ত অধিদপ্তরে গিয়ে সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয় পরিদর্শন করেন দুদক কর্মকর্তারা। সোমবার সংস্থার কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস, চট্টগ্রাম বন্দর, ঢাকা ওয়াসা, বাংলাদেশ বিমান ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কার্যালয়।
গুরুত্বপূর্ণ ২০টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনে সম্প্রতি দুই দফায় ১৯টি প্রাতিষ্ঠানিক দল গঠন করে দুদক। সংস্থার আট পরিচালক এসব দলের নেতৃত্বে রয়েছেন। গঠিত তিন সদস্যের ওই সব দলে একজন করে উপরিচালক ও সহকারী পরিচালক রয়েছেন। সংস্থার মহাপরিচালক মুনির চৌধুরী এসব দলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
জানা গেছে, মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে দেশের সকল স্থলবন্দর, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট এবং আয়কর বিভাগ; সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিমান ও পরিবেশ অধিদপ্তর; মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ওসিএজি অফিস; খন্দকার এনামুল বাছিরের নেতৃত্বে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিআরটিএ এবং ঢাকা মহানগরের সব সাবরেজিস্ট্রি অফিস; এ কে এম জায়েদ হোসেন খানের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, রেলওয়ে এবং তিতাস গ্যাস; বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, ঢাকা ওয়াসা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর; সরদার মঞ্জুর আহমদের নেতৃত্বে বিআইডব্লিউটিএ এবং বিআইডব্লিউটিসি ও কাজী শফিকুল আলমের নেতৃত্বে সওজ এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরে নজরদারি চলবে।
প্রাতিষ্ঠানিক দল গঠনের সময় ওই সব দলের কার্যপরিধিও ঠিক করে দেয় দুদক। সেই অনুসারে প্রাতিষ্ঠানিক দলগুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আইন, বিধি, পরিচালনার পদ্ধতি এবং ওই সব প্রতিষ্ঠানে সরকারি অর্থ অপচয়ের দিকগুলো পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক, নাগরিক সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা, প্রতিবন্ধকতা, সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি, দুর্নীতির কারণ ও দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে। সার্বিক বিশ্লেষণসহ দলের প্রতিবেদন ও সুপারিশ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনে জমা দেবে দলগুলো। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক দলগুলোর মেয়াদকালে ওই সব প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে সেগুলো আলাদাভাবে অনুসন্ধান করবে।