ট্রান্সমিটার পরিবর্তন ও মিটার নিতে ঘুষ আদায়

জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলায় বিদ্যুৎ-সংযোগ নিতে মিটারপ্রতি ১০ হাজার টাকা ও ট্রান্সমিটার পরিবর্তনে ৫০ হাজার ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে নতুন এলাকা বিদ্যুতের আওতায় আনার ক্ষেত্রে দালালের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে।
ওই দুই উপজেলার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩০ জনের মতো দালাল রয়েছে, যাদের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের মাঠ পরিদর্শক থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) পর্যন্ত সরাসরি যোগাযোগ আছে। এসব দালালকে ঘুষ দেওয়া ছাড়া নুতন কোনো সংযোগ বা মিটার পাওয়ার সুযোগ নেই।
গত বছর রাজীবপুরের বালিয়ামারী, জাউনিয়াচর, গড়াইমারী, জহির মন্ডলপাড়া, চররাজীবপুর ও মিয়াপাড়ায় নতুন সংযোগের আওতায় আনা হয়েছে। এতে প্রায় দুই হাজার নতুন গ্রাহক সৃষ্টি হয়েছেন। এ জন্য নতুন সংযোগের পোল ও তার লাগানোর সময় এক দফা অর্থ আদায় করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় মিটারপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছে। দালালেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওই অর্থ আদায় করেছে। অবৈধভাবে আদায় করা ওই অর্থ ভাগ-বাঁটোয়ার করা হয় লাইনম্যান, মাঠ পরিদর্শক থেকে ডিজিএম পর্যন্ত। রাজীবপুরে মাঠ পরিদর্শকের দায়িত্বে রয়েছেন কায়সার আহমেদ। চররাজীবপুর গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘আমি আট হাজার টাকা ঘুষ দেওয়ার পর মিটার পাইছি। আরও পাঁচ হাজার টাকা দাবি করছে। ওই টাকা না দিলে মিটারে ঝামেলা করে দিব। এমন হুমকি দেয় তারা।’ একই গ্রামের মান্নান মিয়া বলেন, ‘মিটার নিতে আমার ১২ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এই টাকা মাঠ পরিদর্শক কায়সার আহমেদ গ্রহণ করেছে।’
এ ছাড়া রৌমারীর চাকতাবাড়ি, আকন্দপাড়া, কাশিয়াবাড়ি, শিবেরডাঙ্গী, কোমরভাঙ্গি, ঠনঠনিয়াপাড়া, কড়াইকান্দি, বারবান্দা, তিনতলি, বাউশমারী, ধনারচর, ধুবলাবাড়ি, কলাবাড়ি গ্রামগুলো নতুন সংযোগের আওতায় এসেছে। এসব এলাকায় পাঁচ হাজারের মতো নতুন গ্রাহক তৈরি হয়েছেন। এখানেও দুই দফায় অর্থ আদায় করা হয়েছে। চাকতবাড়ি গ্রামের জহুরুল ইসলাম নামের এক গ্রাহক বলেন, ‘গ্রামের সব মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এভাবে এক গ্রামের জন্য ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে।’
রৌমারীর কড়াইকান্দি গ্রামের চান মিয়া মেকার, হাশেম আলী ও রফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁদের গ্রামের ট্রান্সমিটার নষ্ট হয়েছিল। নতুন ট্রান্সমিটার নিতে ৬৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন মাঠ পরিদর্শক শীতল চন্দ্র ও শফিকুল ইসলাম। গত বছর নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে মিটারপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাঠ পরিদর্শক কায়সার আহমেদ, শীতল চন্দ্র ও শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন সংযোগে ঘুষ নিয়েছি, এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না।’ দালাল প্রসঙ্গে তাঁরা বলেন, ‘আমরা তো কাউকে টাকা দিতে বলিনি। এ ছাড়া আমরা ছোট কর্মচারী। আমাদের বড় কর্মকর্তারা যদি সুবিধা নেন, তখন আমরা কী করব।’
ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করে জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম আবদুল জলিল বলেন, ‘আমার কোনো লোক ঘুষ নিলে তার প্রমাণ পেলে তাঁকে বরখাস্ত করা হবে। এর আগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় বকশীগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের এজিএম দীপক চন্দ্রকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে রৌমারী ও রাজীবপুরে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া ও মিটারপ্রতি ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।’