অবৈধ ইটভাটায় চলছে পরিবেশদূষণ

চারপাশের পরিবেশ দূষণের মধ্যে ফেলে কোনো ধরনের ভ্যাট, ট্যাক্সের ধার না ধেরে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় দিব্যি চলছে ড্রামচিমনিওয়ালা ১২টি ইটভাটা। নীতিমালা লঙ্ঘন করে লোকালয় ও কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে এসব ইটভাটা।
সরেজমিনে উপজেলার গোবিন্দপাড়া, নরদাশ, শুভডাঙ্গা ও আউচপাড়া ইউনিয়নের জনবসতি এলাকায় এবং কৃষিজমির পাশে সাত কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে এসব ইটভাটা। ভাটাগুলোতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। শ্রমিকেরা জানান, এসব ভাটায় কয়লা ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাই সারা বছর কাঠই পোড়াতে হয়। ভাটাগুলোর পাশে রয়েছে ফলের বাগান, আলু ও ধানখেত। আর ১০০ থেকে ১৫০ গজের মধ্যে রয়েছে জনবসতি। টিনের ড্রামচিমনি দিয়ে কাঠ পোড়ানোর ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে লোকালয়ে। অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা ও কৃষিজমির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ।
স্থানীয় ৩০ থেকে ৪০ জন বাসিন্দা ও উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, সাত-আট বছর ধরে স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি সরকারি অনুমোদন ছাড়াই লোকালয় ও আবাদি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপন করে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। ড্রামচিমনিওয়ালা এসব ইটভাটার মালিকেরা হলেন সুজন পালশার মোয়াজ্জেম হোসেন, বাইগাছার আবদুস সালাম, বানাইপুরের রশিদুল ইসলাম, শালমারার আফসার আলী, বাকশইলের আমিনুল ইসলাম, গোবিন্দপাড়ার উকিল চান, পাশুড়িয়ার আবদুস সামাদ, জয়পুরের আবুল কাশেম, মনোপাড়ার রাজা মিয়া, বামনী গ্রামের দুলাল হোসেন, বানইলের আবদুস সালাম ও মজোপাড়ার বুলু মিয়া। তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারকে ভ্যাট ও ট্যাক্স না দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
সুজনপালশার দেছের আলী, অভ্যাগতপাড়ার আবদুল জব্বার অভিযোগ করেন, কৃষিজমিতে বা জমির পাশে এসব ইটভাটা স্থাপন করায় তাঁদের ফসলের ক্ষতি হয়। ভালো ফলন পাওয়া যায় না। এসব ইটভাটার মালিকেরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁরা প্রতিবাদ করতেও সাহস পান না।
তবে ২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মকবুল হোসেন বাদী হয়ে উপজেলার বাকশাইল, সুজনপালশা, বাইগাছা, জয়পুর, গোবিন্দপাড়া, শালমারা ও পাশুড়িয়া এলাকার সাতটি ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে পৃথক সাতটি মামলা করেন। মামলাগুলো এখনো বিচারাধীন বলে রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন পরিদর্শক জানান। তবে মামলা হলেও ভাটাগুলো বন্ধ রাখা হয়নি।
কৃষকদের এসব অভিযোগ সঠিক হিসেবে উল্লেখ করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুর রহমান বলেন, কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন করা ঠিক না। ফসলি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপন করায় ফসলের উৎপাদন কম হয়। ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে এসব লক্ষ রাখা উচিত বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ওরফে হেলাল বলেন, তাঁরা সরকারি নিয়ম মেনে ইটভাটা চালাচ্ছেন। সমিতিভুক্ত ২৭টি ইটভাটার প্রত্যেকটি বছরে ৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা করে ভ্যাট পরিশোধ করছে। কিন্তু অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ওই ১২টি ইটভাটার মালিকেরা কোনো ভ্যাট বা ট্যাক্স দেন না। এসব ইটভাটায় ইট পোড়াতে কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহার করা হয়।
ড্রামচিমনিওয়ালা ইটভাটার মালিক রশিদুল ইসলাম ও আবদুস সালাম অনুমতি ছাড়াই ইটভাটা স্থাপন এবং কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেই তাঁরা ইটভাটা চালাচ্ছেন। তবে প্রশাসন বলতে তিনি কী বোঝাচ্ছেন তা পরিষ্কার করেননি।
রাজশাহী কাস্টমস এক্সসাইজ ও ভ্যাট কার্যালয়ের ডেপুটি কমিশনার রুহুল আমিন বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে।’
পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহীর উপপরিচালক মামুনুর রশিদও ড্রামচিমনির ইটভাটা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে স্বীকার করে বলেন, বাগমারা এলাকায় গত শুক্রবার অভিযান চালানো হয়। কিন্তু কোনো ড্রামচিমিনর ইটভাটা সেখানে পাওয়া যায়নি। শুধু ফিক্সড চিমিনর ইটভাটার দেখা গেছে। তবে ড্রামচিমিনওয়ালা ইটভাটাগুলো তো অনেক দিন ধরেই চলছে বলে জানালে এই প্রতিবেদককে তাঁর দপ্তরে গিয়ে ওই ভাটাগুলোর তালিকা দিতে বলেন।
বাগমারা থানার ওসি সেলিম হোসেন বলেন, এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিভাগের। তবে কোনো বিভাগ পুলিশের সহযোগিতা চাইলে তা দেওয়া হবে।