রোহিঙ্গাদের জন্য মালয়েশিয়ার ত্রাণের প্রথম বহর কক্সবাজারে

>* শিবির পরিদর্শন করবেন মালয়েশিয়ার স্বেচ্ছাসেবীরা * শেখ হাসিনা-নাজিব রাজাকের ফোনালাপ

মিয়ানমার থেকে নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য মালয়েশিয়ার ত্রাণের বহর আজ বুধবার চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারে পৌঁছেছে। ত্রাণের জাহাজের সঙ্গে মালয়েশিয়ার স্বেচ্ছাসেবীদের একটি প্রতিনিধিদলও কক্সবাজার গেছে। ২৫ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদল গত অক্টোবরের পর থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে উখিয়া ও টেকনাফে যাবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স) মো. খুরশেদ আলম গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে এই তথ্য জানান। তিনি জানান, মালয়েশিয়ার জাহাজ ‘নটিক্যাল আলিয়া’ থেকে খালাসের পর ত্রাণের একটি বহর মালয়েশীয় স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে গভীর রাতে কক্সবাজার রওনা হবে। প্রাথমিকভাবে ওই ত্রাণসামগ্রী কক্সবাজারের স্থানীয় খাদ্যগুদামে রাখা হবে। এরপর রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহায়তায় তা বিতরণ করা হবে।
খুরশেদ আলম জানান, ত্রাণবাহী জাহাজে আসা স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে ৪৩ জন গতকাল রাতেই চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে মালয়েশিয়ার পথে যাত্রা করেছেন।
এদিকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে গত রোববার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের সব ধরনের প্রয়াসে মালয়েশিয়ার সমর্থনের কথা জানান নাজিব রাজাক।
ত্রাণসামগ্রীবাহী মালয়েশীয় জাহাজ নটিক্যাল আলিয়া গতকাল বেলা সোয়া ১১টার দিকে চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল জেটিতে ভেড়ে। এর মিনিট দশেক পরই বাংলাদেশের ২৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল জাহাজে ওঠে। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা জাহাজের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠকের পর তাঁরা জাহাজ থেকে নেমে আসেন। এরপর টার্মিনাল চত্বরে ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর অনুষ্ঠান হয়। এ অনুষ্ঠানে সচিব মো. খুরশেদ আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ ১৯৭৯ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে। কখনো বোঝা মনে করেনি। তবে তারা এখানে অবস্থান করে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করুক সেটি আমরা চাই না। এ জন্য সরকার তাদের ঠেঙ্গারচরে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার নূর আশিকিন বিনতে মোহাম্মদ তায়ইব বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করে যাবে মালয়েশিয়া। নটিক্যাল আলিয়াকে বাংলাদেশে আসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
মালয়েশীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুল আজিজ বিন আবদুল রহিম বলেন, ‘মালয়েশিয়ার জনগণের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে আমরা এসেছি। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। ভবিষ্যতে ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের কল্যাণে আমরা সহযোগিতা করতে চাই।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জাহাজে করে আনা ১ হাজার ৪৭২ টন ত্রাণসামগ্রী ১৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে দেওয়া হবে।
তুরস্কভিত্তিক টার্কি দিয়ানেত ভাকফি (টিডিভি) ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় পুতেরা ওয়ান মালয়েশিয়া ক্লাব ও মালয়েশিয়ান কনসালটেটিভ কাউন্সিল অব ইসলামিক অর্গানাইজেশন (এমপিআইএম) ত্রাণ সরবরাহের এই কাজ করছে। জাহাজে আসা স্বেচ্ছাসেবী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পুতেরা ওয়ান মালয়েশিয়া ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা মালয়েশিয়ার এমপি আবদুল আজিজ বিন আবদুল রহিম এবং এমপিআইএমের প্রেসিডেন্ট এমপি মোহাম্মদ আজমি বিন আবদুল হামিদ।