বিদ্যালয়ের গাছ কাটছেন আওয়ামী লীগ নেতা

চন্দ্রহার কে আর শিক্ষায়তনের  গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার তোলা ছবি l প্রথম আলো
চন্দ্রহার কে আর শিক্ষায়তনের গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার তোলা ছবি l প্রথম আলো

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের চন্দ্রহার কে আর শিক্ষায়তনের মাঠের ১৭টি গাছ কেটে ফেলছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ওই নেতার নাম বীরেন চন্দ্র ঘরামী। তিনি বাটাজোর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও স্থানীয় ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ১৯১৬ সালে স্থানীয় জমিদার কৈলাস চন্দ্র ও রমেশ চন্দ্র পৌনে ছয় একর জমিতে চন্দ্রহার কে আর শিক্ষায়তন (মাধ্যমিক বিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করেন। এলাকার প্রভাবশালী দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে সাত-আট বছর ধরে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি নেই। এই সুযোগে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি দেড় একর সম্পত্তি দখলে নিয়েছেন। এ ঘটনায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।

বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, বীরেন চন্দ্র ঘরামী বিদ্যালয়ের জমিতে থাকা রেইনট্রি, চাম্বল, মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ১৭টি গাছ বিক্রি করে সাড়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল বেশ কিছুদিন ধরে বিদ্যালয়ের জমি দখল ও গাছ কেটে নেওয়ার পাঁয়তারা চালায়। বিষয়টি আমি লিখিতভাবে ইউএনও মো. মাহবুব আলম ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রব হাওলাদারকে জানাই। তবে তাঁরা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সোমবার দুপুরে আমি এসএসসি পরীক্ষার দায়িত্ব পালন শেষে স্কুলে ফিরে দেখি ৮-১০ জন শ্রমিক স্কুলের গাছ কাটছেন। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি আবদুর রব হাওলাদারকে জানাই। তিনি এ বিষয়ে বীরেন চন্দ্র ঘরামীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন।’

গতকাল বেলা দুইটায় সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রমিকসর্দার শামীম হাওলাদারের নেতৃত্বে ১০-১২ জন বিদ্যালয়ের গাছ কাটছেন। জানতে চাইলে শামীম বলেন, ইউপি সদস্য বীরেন চন্দ্র ঘরামীর কাছ থেকে ব্যবসায়ী ডায়মন্ড শেখ গাছগুলো কিনেছেন। ডায়মন্ড শেখের ভাড়া করা শ্রমিক হিসেবে তাঁরা গাছ কাটছেন। ডায়মন্ড শেখ বলেন, ‘কত টাকায় গাছগুলো কিনেছি তা বীরেনের কাছ থেকে জানতে পারবেন।’

বীরেন চন্দ্র ঘরামী বলেন, রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ করতে চেয়ারম্যানের নির্দেশে গাছ কাটা হচ্ছে। সাড়ে তিন লাখ নয়, মাত্র ৫০ হাজার টাকায় গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রব হাওলাদার বলেন, গাছ নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। তাই গাছ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে টাকা মসজিদে দেওয়া হয়েছে।

ইউএনও মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘বিষয়টি কখনোই আমাকে অবহিত করা হয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’