রোগী বাড়লেও বাড়েনি সুযোগ-সুবিধা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দগ্ধ রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে সেই অনুপাতে বাড়েনি সুযোগ-সুবিধা। নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক, সেবিকা ও কর্মকর্তা-কর্মচারী। নেই রোগীর তুলনায় প্রয়োজনীয় শয্যাও। এ কারণে রোগীর চাপ সামাল দিতে বেশ গলদঘর্ম হতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। সম্প্রতি হরতাল-অবরোধের আগুনে পোড়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চাপ আরও বেড়েছে।

ক্রমবর্ধমান রোগীর চাপ সামাল দেওয়াসহ বিভিন্ন অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে এ বছরের নভেম্বরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বার্ন ইউনিটকে ইনস্টিটিউটে রূপান্তর করার প্রশাসনিক আদেশ জারি করেছে। তবে তা বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে ধীরগতি। চিঠি চালাচালিতেই সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।

বার্ন ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, বার্ন ইউনিটকে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্লাস্টিক সার্জারি’ নামে প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ১২ নভেম্বর প্রশাসনিক আদেশ জারি করে। এরপর বর্তমান বার্ন ইউনিটের পাশে দুই বিঘা জমিতে বিশতলা ভবন নির্মাণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখায় আবেদন করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক শহীদুল্লাহ ও কবির উদ্দিনের নেতৃত্বে ১৯৮৭ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৩ সালে ৫০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ ইউনিট আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। ২০০৯ সালে তা ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়। কিন্তু প্রতিবছর রোগীর সংখ্যা বেড়ে চললেও বাড়েনি ইউনিটের আওতা।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। ২০০৪ সালে এখানে ভর্তি হয় এক হাজার ২৮৫ জন রোগী, ২০০৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৫৭৩ জন। ২০০৬ সালে নয় হাজার ৫৭৬, ২০০৭ সালে ১৬ হাজার ১৫০, ২০০৮ সালে ১৮ হাজার ৭৫০, ২০০৯ সালে ১৯ হাজার ৬৭, ২০১০ সালে ২০ হাজার দুই, ২০১১ সালে ২৪ হাজার ১৫৬ এবং ২০১২ সালে ৩৩ হাজার ৬৫৫ জন রোগী বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিয়েছে। সাকল্যে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৪৯ হাজার ২১৪ জন। ২০১৩ সালের পরিসংখ্যান এখনো করা হয়নি। হরতাল-অবরোধের আগুনে এ বছর দগ্ধ রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হবে বলে কর্তৃপক্ষের ধারণা।

বার্ন ইউনিট সৃষ্টির পর থেকে শয্যা অনুপাতে চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়েছিল। বর্তমানে শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। কিন্তু সে অনুযায়ী বাড়েনি চিকিৎসক, নার্সসহ জনবল। প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ জন রোগী এলে তা কোনোমতে সামাল দেওয়া গেলেও দুর্যোগের সময় ব্যবস্থাপনা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।

বার্ন ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৬০ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে বার্ন ইউনিট। এর মধ্যে ৪২ জনই হচ্ছেন শিক্ষানবিশ। প্রতিদিন গড়ে এ ইউনিটে ভর্তি থাকে ৩৫০ জন রোগী। সেবিকা দরকার ১৫০ জন। কিন্তু আছেন ৭০ জন। অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীও প্রয়োজনের তুলনায় কম।

চিকিৎসকেরা বলছেন, একজন সাধারণ রোগীর চেয়ে দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যে হতে হয়। এখানে দর্শনার্থী ছাড়াও এক রোগীর মাধ্যমে আরেক রোগী সংক্রমিত হতে পারে। এ জন্য প্রত্যেক রোগীর নিবিড় চিকিৎসা দরকার। কিন্তু দর্শনার্থী ও স্থানের অভাবে তা করা সম্ভব হচ্ছে না।

বার্ন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সামন্ত লাল সেন প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন রকমের প্রশাসন দিয়ে চলছে বার্ন ইউনিট। দেশে এই মুহূর্তে যেখানে ৪০০ থেকে ৫০০ প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ দরকার, সেখানে আছেন মাত্র ৩০ জন। এর সংখ্যা বাড়ানো দরকার। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রংপুর, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় থাকা বার্ন ইউনিটগুলোকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। আর এ জন্য বার্ন ইউনিটকে দ্রুত ইনস্টিটিউটে রূপান্তর করা আবশ্যক।