জাজিরায় চাঁদা না দেওয়ায় ৩৫ ঘরে ভাঙচুর-লুটপাট

চাঁদা না দেওয়ায় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় গতকাল শুক্রবার ৩৫টি বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর অভিযোগ উঠেছে। হামলাকারীরা তিনজন এসএসসি পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র ও পড়ার বই ছিঁড়ে ফেলেছে। তারা পরবর্তী পরীক্ষাগুলো দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে।

জানতে চাইলে জাজিরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার গজনাইপুর গ্রামের তমিজ উদ্দিন খান তাঁর সমর্থকদের নিয়ে গ্রামটির কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন এমন খবর পেয়ে পুলিশ গিয়েছিল। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। পরে অভিযান চালিয়ে লুট হওয়া চারটি গরু উদ্ধার করা হয়েছে। লুট হওয়া বাকি জিনিসপত্র উদ্ধার ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গজনাইপুর গ্রামের তমিজ উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের চৌকিদার গোষ্ঠীর ওপর প্রভাব বিস্তার করে আসছিলেন। দুই সপ্তাহ ধরে তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য সিরাজুল ইসলাম ও শওকত চৌকিদারের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় তমিজ তাঁদের ওপর ক্ষুব্ধ হন। গতকাল সকাল সাতটার দিকে তিন শতাধিক সমর্থক নিয়ে তিনি চৌকিদার গোষ্ঠীর ২০টি বাড়িতে হামলা চালান। প্রথমে ককটেল ফাটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ানো হয়। এরপর অন্তত ৩৫টি বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। হামলাকারীরা বিভিন্ন জিনিসপত্রের পাশাপাশি ২০টি গরু নিয়ে গেছে।

শওকত চৌকিদার বলেন, ‘তমিজ খান কয়েক দিন ধরে আমাদের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা চাইছিলেন। আমরা চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় তিনি হামলা চালিয়েছেন। আমার ঘরের সব জিনিস ও দুটি গরু নিয়ে গেছে হামলাকারীরা।’

ইউপি সদস্য বলেন, ‘গত ইউপি নির্বাচনের পর থেকে তিনি (তমিজ খান) আমাদের ওপর নানাভাবে প্রভার বিস্তার করছেন। নিজের দলবল চালানোর জন্য কয়েক দিন ধরে তিনি আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করছিলেন। চাঁদার টাকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে হামলা চালানো হয়।’

তবে তমিজ উদ্দিন খান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চৌকিদার গোষ্ঠীর সঙ্গে আমার বিরোধ রয়েছে, এটা ঠিক। তবে আমি কারও কাছে কোনো চাঁদা দাবি করিনি। আর তাঁরা নিজেরা নিজেদের ঘর ভাঙচুর করে আমার নামে অভিযোগ করছেন।’

তিন এসএসসি পরীক্ষার্থীর কী হবে?

হামলাকারীরা গজনাইপুর গ্রামের সোবাহান চৌকিদারের বাড়ির একটি পাটকাঠির স্তূপে অগ্নিসংযোগ করে। একপর্যায়ে তাঁর বসতঘরেও ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এ সময় ঘরে থাকা তাঁর ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী হৃদয় চৌকিদারের পাঠ্যবই ও পরীক্ষার প্রবেশপত্র ছিঁড়ে ফেলে হামলাকারীরা। একই গ্রামের আল আমিন চৌকিদার ও নিশি আক্তারের পাঠ্যবই এবং প্রবেশপত্রও ছিঁড়ে ফেলা হয়। তিনজনই স্থানীয় লাউখোলা এএস উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

পরীক্ষার্থী নিশি আক্তার বলে, ‘সকালবেলা ঘরে বসে পড়ালেখা করছিলাম। হঠাৎ কিছু মানুষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের ঘরে ভাঙচুর চালাতে থাকে। আমার টেবিল থেকে বই ও প্রবেশপত্র নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। প্রবেশপত্রটি না ছেঁড়ার জন্য আমি তাদের পা জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলাম। তারপরও তারা আমার প্রবেশপত্রটি ছিঁড়ে ফেলল। এখনো সাতটি পরীক্ষা বাকি রয়েছে। এখন আমি ওই পরীক্ষাগুলো কীভাবে দেব?’

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নলিনী রঞ্জন রায় প্রথম আলোকে বলেন, ওই তিন এসএসসি পরীক্ষার্থীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে। পরবর্তী পরীক্ষাগুলোয় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে যাতে তাদের কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশনা দেবেন।