যাচাই-বাছাই কমিটির বিরুদ্ধেই অভিযোগ

নাটোরের সিংড়া উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের নামে বাছাই কমিটির সদস্য পঙ্কজ ভট্টাচার্য্যের বিরুদ্ধে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এদিকে জেলার গুরুদাসপুর উপজেলা কমিটির দুজন সদস্য বিশেষ সুবিধা নিয়ে দুজন অমুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ৬৩ জন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা।
সিংড়া উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের আমিনুল হক (৬৩) ১৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে একটি লিখিত দরখাস্ত দাখিল করেছেন। দরখাস্তে তিনি নিজেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করেন। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, ১৯৭১ সালে তিনি বর্তমান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের উপ-অধিনায়ক পঙ্কজ ভট্টাচার্য্যের অধীনে যুদ্ধ করেছিলেন। পরে মুক্তিবার্তা সনদেও পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য তাঁর কমান্ডার হিসেবে স্বাক্ষর করেছিলেন। সেই সনদ তিনি সম্প্রতি সিংড়ার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিকে দেখান। এ সময় পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য নিজের স্বাক্ষর অস্বীকার করেন। এতে যাচাই-বাছাই কমিটি তাঁর সনদের ব্যাপারে আপত্তি তোলে।
আমিনুল আরও অভিযোগ করেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন না করে কে কত টাকা দিচ্ছেন, তার ওপর নির্ভর করে এখন পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য লাল মুক্তিবার্তায় বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধার নামে করা তাঁর স্বাক্ষর স্বীকার বা অস্বীকার করছেন। পঙ্গজ ভট্টাচার্য্য তাঁর কাছেও ২০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন। না দেওয়াতেই যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে তিনি নিজ স্বাক্ষর অস্বীকার করেন। তিনি এর প্রতিকার এবং পঙ্কজ ভট্টাচার্য্যের শাস্তি দাবি করেন। প্রসঙ্গত, পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য বর্তমান যাচাই-বাছাই কমিটির একজন সদস্য।
তবে পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য বলেন, আমিনুল হক তাঁর যে সনদ দাখিল করেছেন তা সঠিক নয়। কারণ তাতে তাঁর (পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য) স্বাক্ষরটি ছিল জাল। বোর্ডের সামনে এ কথা বলায় আমিনুল ক্ষুব্ধ হয়ে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
সিংড়ার ইউএনও সাদেকুর রহমান জানান, অর্থ লেনদেনের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে।
এদিকে গুরুদাসপুরে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গতকাল শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন বাছাই কমিটির বাইরে থাকা ৬৩ জন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানে স্থানীয় সাংসদ আবদুল কুদ্দুস মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় পদাধিকার বলে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ও ইউএনও ইয়াসমিন আক্তার সদস্য সচিব ছিলেন। সাংসদ দেশের বাইরে থাকায় পদাধিকার বলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আনোয়ার হোসেন বাছাই কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন নাটোর জেলা ডেপুটি কমান্ডার আবু তালেবসহ তোফাজ্জল হোসেন, সাইফুল ইসলাম, জাভেদ মাসুদ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে দাবি করা হয়, ওই বাছাই দুজন সদস্য দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে আবদুল গফুর ও রইস উদ্দিন নামে দুই ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাইয়ে দিয়েছেন। অথচ তাঁরা দুজন আদৌ মুক্তিযোদ্ধা নন।
অভিযোগে বলা হয়, উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের আব্দুল ওহাবকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি িদতে জাবেদ মাসুদ ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। তখন মুক্তিযোদ্ধা ওহাবের ছেলে ১৬ ফেব্রুয়ারি ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। তবে জাবেদ মাসুদ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মুক্তিযোদ্ধা বাছাই কমিটির অপর সদস্য সাইফুল ইসলাম মোল্লার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে গুরুদাসপুর বাজারের হিন্দুদের বাড়িঘর লুটপাটসহ এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
সাইফুল ইসলাম অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিতে থাকা বিতর্কিত ওই দুই সদস্যকে বাদ দিয়ে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা বাছাইয়ের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে একটি আবেদন পাঠানো হয়েছে।
তবে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আনোয়ার হোসেন বলেন, বাছাই কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। কমিটি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছে।