আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে স্বামীকে ১০ বছরের কারাদণ্ড

সিফাত হত্যা  মামলা
সিফাত হত্যা মামলা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাতকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে স্বামী মো. আসিফকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক সাঈদ আহম্মেদ এ রায় ঘোষণা করেন। অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁদের খালাস দিয়েছেন আদালত।
খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন সিফাতের শ্বশুর হোসেন মোহাম্মদ রমজান, শাশুড়ি নাজমুন নাহার এবং প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জোবাইদুর রহমান।
রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সিফাতের চাচা ও মামলার বাদী মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা প্রত্যাশিত বিচার পাননি। এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করবেন। তিনি বলেন, ‘ময়নাতদন্তে সিফাতকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করা সত্ত্বেও আদালত এটিকে আত্মহত্যার প্ররোচনা গণ্য করে রায় দিয়েছেন। এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা হিসেবেও ধরা হয়, তাতেও আসামিপক্ষ আত্মহত্যার পক্ষে কোনো যুক্তি দেখাতে পারেনি, সে ক্ষেত্রে সিফাতের শ্বশুর-শাশুড়ি কীভাবে খালাস পান?’
রায়ে বলা হয়, রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় ২২ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(ক)-এর অভিযোগ (নির্যাতন করে হত্যা) প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। তা ছাড়া প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলার আলামত গোপনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রমাণেও ব্যর্থ হয়েছে তারা। তদন্তেও গাফিলতি রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপিত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অপরাধে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় আসিফকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
রায়ে আরও বলা হয়, আসামির গ্রেপ্তারের তারিখ থেকে এ রায় কার্যকর হবে। আদালত আসামির বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন মাহবুবুর রহমান। তাঁকে সহায়তা করে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি। সমিতির প্যানেল আইনজীবী ফামিদা আকতার বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা আপিল করবেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে, সিফাতের গায়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তিনি আত্মহত্যা করেননি। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, রায়ের আগে আসিফকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। জামিনে থাকা অন্য তিনজন আদালতে হাজির ছিলেন।
২০১৫ সালের ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরের মহিষবাথান এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে ওয়াহিদা সিফাতের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। প্রথমে সিফাত আত্মহত্যা করেছেন বলে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন দাবি করেন। এ ঘটনায় সিফাতের চাচা মিজানুর রহমান খন্দকার রাজপাড়া থানায় হত্যা মামলা করেন। প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিফাতের শরীরে নির্যাতনের আঘাতের চিহ্ন নেই এবং তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এই ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক হলেন জোবাইদুর রহমান। সিফাতের পরিবার এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে। দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সিফাতকে হত্যা করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত ভার প্রথমে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে দেওয়া হলেও পরে সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়।
গত বছরের ২৩ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আহম্মেদ আলী চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জোবাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০১ ধারায় এবং সিফাতের স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(ক) ও ৩০ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।