আ.লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যু

সিলেটের ওসমানীনগরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গত রোববার গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সাইফুল ইসলামের মা সেলিনা বেগমের আহাজারি। উত্তর কালনীরচর গ্রাম থেকে গতকাল দুপুরে তোলা ছবি l প্রথম আলো
সিলেটের ওসমানীনগরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গত রোববার গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সাইফুল ইসলামের মা সেলিনা বেগমের আহাজারি। উত্তর কালনীরচর গ্রাম থেকে গতকাল দুপুরে তোলা ছবি l প্রথম আলো

সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন সোহেল মিয়া (৩৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রোববার মধ্যরাতে মারা গেছেন। এ নিয়ে রোববার সকালের ওই সংঘর্ষে দুজন নিহত হলেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের ওই সংঘর্ষ হয় উপজেলার বাংলাবাজারে। সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ওই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন সামনে রেখে ওসমানীনগর থানা ভবনে গতকাল সোমবার নির্বাচনের প্রার্থী, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম। সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে বর্তমান নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর।
রোববার সকালের সংঘর্ষে আহত হওয়ার পর সোহেল মিয়াকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মধ্যরাতে তিনি মারা যান। তাঁর বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার উত্তর কালনীরচরে। এটি ওসমানীনগরের বাংলাবাজারের লাগোয়া গ্রাম।
সোহেলের নিকটাত্মীয় লুৎফুর রহমান মুঠোফোনে গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষে সোহেল মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পান। মাথার গুরুতর জখমেই তিনি মারা গেছেন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
এর আগে সংঘর্ষের সময় ছররা গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন জগন্নাথপুরের উত্তর কালনীরচরের সাইফুল ইসলাম (১৮)।
কালনীরচর গ্রামটি উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব কালনীরচর—এই তিন ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে উত্তর কালনীরচর গ্রামের কিছু অংশ পড়েছে ওসমানীনগরে, বাকি অংশ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেগম বাজার থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বাংলাবাজার। রোববার এখানেই আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়।
ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল আউয়াল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে নিহত সোহেল ও সাইফুলের লাশ পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত মামলা হয়নি। নিহত দুজনের পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের করা সাধারণ ডায়েরির (জিডি) সূত্র ধরে রোববার রাতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে পূর্ব কালনীরচরের রুহুল আমীন, রাসেল মিয়া, আবদুল্লাহপুর গ্রামের সুলতান আলী ও মিছার আহমদকে আটক করা হয়। এ ছাড়া সংঘর্ষস্থল থেকে আটক পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন হবে আগামী ৬ মার্চ। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া আতাউর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক মো. আখতারুজ্জামান চৌধুরী (জগলু চৌধুরী) বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থী হওয়ায় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির মো. শিব্বির আহমদও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সংঘর্ষের স্থল বাংলাবাজারসহ আশপাশের এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বাজারের দোকানপাট বন্ধ। কয়েকজন বলেন, আতঙ্কে কেউ দোকান খুলছে না। পুলিশও দোকানপাট বন্ধ রাখতে বলে গেছে।
গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, নিহত সাইফুল ও সোহেল রাজনীতি করতেন না। তাঁরা ওসমানীনগরের ভোটারও নন, পাশের জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা। সাইফুল ছিলেন তাজপুর হজরত শাহ জালাল (রহ.) হাফেজি মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্র। তিনি রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজও করতেন। সোহেল ছিলেন দিনমজুর। নিজের ঘরদোর ছিল না তাঁর।
তবে রোববার ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতাউর রহমান দাবি করেছিলেন, নিহত সাইফুল তাঁর সমর্থক ছিলেন।
নির্বাচন কমিশনারের মতবিনিময়
ওসমানীনগর থানা ভবনে গতকাল বিকেলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার, পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান, ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এইচ এম এজহারুল হক, জেলার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মনির হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত আলীসহ নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সভার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনাটি সভায় গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে করণীয় সব পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার।
সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে কোনো অন্যায় বরদাশত করা হবে না। রোববারের সংঘর্ষের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সভায় উপস্থিত প্রার্থী ও রাজনীতিকেরা সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন।