যে দুর্গতি ভোগ করছি, তা অসহনীয়

দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা শ্বাসরুদ্ধকর একটা অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছি। সমাধান কোন দিকে জানি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু রাজনীতিকদের দোষারোপ করে লাভ নেই। যে দুর্গতি ভোগ করছি, তা অসহনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমীতে গতকাল শুক্রবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত বাংলাদেশের সাম্প্রতিক মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ে জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাবিবুর রহমান এসব কথা বলেন।
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘জানমাল রক্ষা করা ফরজ, তবে আমরা সেই ফরজ আদায় করতে পারছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভোটের অধিকার বড় অধিকার। তবে এর চেয়ে বড় বেঁচে থাকার অধিকার।’
কয়েক মাস ধরে দেশে বর্বরতা ও অমানবিকতা চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর আহ্বানে বর্বরতার শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা যারা তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত ও বিত্তবান, তাদের চেয়ে যারা গরিব ও অসহায়, তাদেরই সব সহ্য করতে হচ্ছে। তাদের কথা ভেবে সমাধানের একটা পথ খুঁজে বের করতে হবে।’
সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ হতে পারে না। রাষ্ট্রকে অবশ্যই সন্ত্রাসকে যুঝতে হবে। মানুষকে নিরাপত্তা দিতে হবে।
চলমান সহিংসতাকে নিছক রাজনৈতিক সহিংসতা হিসেবে তুলে ধরতে চাননি আলোচকদের কেউই। এ সহিংসতার পেছনে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি রয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা।
এ সহিংসতা অগণতান্ত্রিক শক্তির প্ররোচনাতেই হচ্ছে বলে মনে করেন আলোচক প্রবীণ আইনজীবী আমীর-উল ইসলাম। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিচারের প্রয়াসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চলমান একটি প্রক্রিয়া বলে মত দেন তিনি। এ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বৈশ্বিক। তাই আন্তর্জাতিক বিশ্বেরও এর প্রতি সমর্থন থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি। শান্তির জন্যই এ অপরাধের বিচার হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দিনব্যাপী এ সংলাপের মূল প্রবন্ধ ‘বিচার অথবা দায়মুক্তি: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার, বাংলাদেশ ও চলমান সন্ত্রাস’ পাঠ করেন আইনজীবী তানিয়া আমীর। এতে তিনি জামায়াতের নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর না করতে মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের হাইকমিশন ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার আবেদনের তীব্র সমালোচনা করেন। এ বিচারের প্রক্রিয়াকে তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং অপরাধ করে দায়মুক্তির সংস্কৃতির বিরুদ্ধেও লড়াই হিসেবে চিহ্নিত করেন। বাংলাদেশের এ নিজস্ব উদ্যোগে সহায়তা করার জন্য তিনি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা প্রত্যাশা করেন।
সংলাপে পেশাজীবীদের প্রতিনিধি চিকিৎসক মাহমুদ হাসান বলেন, ‘একাত্তরে আমাদের ওপর চলা বর্বরতাকে যারা প্রশ্রয় দিয়েছিল, সহায়তা করেছিল, তাদের আমরা চিনি। দেশের বর্তমান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এরা এখনো সক্রিয়।’
জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে রাজনৈতিক ও সামাজিক যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার আহ্বান জানান বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম।
যারা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে বাধা দেয়, তারা গুয়ানতানামো কারাগারে আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে কোন নীতি অনুসরণ করে—এ প্রশ্ন করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
প্রতিরোধের নামে দেশজুড়ে হাজার হাজার গাছ কেটে ফেললেও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছ থেকে কোনো প্রতিবাদ না হওয়ার সমালোচনা করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।
সংলাপে কয়েকটি রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।