জনপ্রশাসনের উচ্চ পদে নারীর সংখ্যা বাড়ছে

জনপ্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ সচিবের দায়িত্বে একজন নারীকে দেখতে দেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত। বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থায় নারী সচিব রয়েছেন সাতজন। এর বাইরে ভারপ্রাপ্ত সচিব অর্থাৎ সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন আরও দুজন।
সরকারি চাকরিতে উচ্চ পদে উঠে আসছেন নারীরা। সাত সচিবের পাশাপাশি প্রশাসনে বর্তমানে ৫৩৩ জন অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন, যার মধ্যে ৭৮ জন নারী। এ ছাড়া ৯৭ জন যুগ্ম সচিব, ২০২ জন উপসচিব, ৩৬০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব এবং ৪৩৫ জন সহকারী সচিব নারী। তাঁরা আছেন জনপ্রশাসনের নেতৃত্বে উঠে আসার অপেক্ষায়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘উচ্চ পদে আসার মতো এখনো অনেক যোগ্য নারী আছেন। যেমন আগামী কয়েক বছরে যেসব নারী সচিব অবসরে চলে যাবেন, যোগ্য অতিরিক্ত সচিবদের থেকে বাছাই করে সচিব পদে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হবে।’
বর্তমানে সাত সচিবের মধ্যে দুজন সিনিয়র সচিব। তাঁরা হলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম এবং বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুশফেকা ইকফাৎ। বাকি পাঁচজন হলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব শামছুন নাহার, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সচিব আকতারী মমতাজ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য জুয়েনা আজিজ এবং জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক কানিজ ফাতেমা।
ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক শিরিন আখতার এবং বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম। নারী অতিরিক্ত সচিবদের কেউ কেউ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যেমন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা ও আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের প্রধান নিয়ন্ত্রক আফরোজা খান।
জনপ্রশাসনের উচ্চ পদে নারীর হার ঐতিহাসিকভাবে কম কেন জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমস্যাটা অনেক আগে থেকে। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে এ দেশের নারীরা শিক্ষায় পিছিয়ে ছিল। সরকার, সমাজ ও পরিবারের পক্ষ থেকেও বাধা ছিল। এটা প্রায় কেটেছে। দুঃখজনক যে প্রশাসনসহ কয়েকটি ক্যাডারে ১৯৮২ সালের আগে নারীদের নেওয়াই হতো না।’ মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নারী যত বেশি এগিয়ে আসবে, দেশের উন্নতি তত তাড়াতাড়ি হবে। আর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে নারী যে সক্ষম ও যোগ্যতাসম্পন্ন, এই প্রমাণ এরই মধ্যে দেশবাসী দেখছে।’
শুধু উচ্চ পদে নয়, সার্বিকভাবেও সরকারি চাকরিতে নারীদের যোগ দেওয়া বাড়ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের মোট বেসামরিক সরকারি চাকরিজীবী ১১ লাখ ১৫ হাজার ৯২২ জনের মধ্যে নারীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ১৯৯ জন বা ২২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২০১৫ সালে ১৩ লাখ ৮২ হাজার ৩৯৩ জনের মধ্যে নারী ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫৪ জন। অর্থাৎ পাঁচ বছরে নারীর উপস্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
আবার প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরিজীবী নারীর সংখ্যা ২০১১ সালের ১৭ হাজার ৬১৬ জন থেকে ক্রমাগত বেড়ে ২০১৫ সালে দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৯৯৬ জন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৩৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন ২৭৯ জন, যার মধ্যে ১০৭ জনই নারী। এই ক্যাডারের মেধাতালিকার দিক থেকেও প্রথম ১০ জনের ৬ জনই নারী। স্বাধীনতার পর সিভিল সার্ভিসের প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম নারীরা নিয়োগ পান ১৯৮২ সালে।
প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক বলেন, ‘সব জায়গার মতো প্রশাসনের নীতিনির্ধারণী মহলেও এখনো একধরনের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা রয়ে গেছে। এখনো যোগ্য নারীকে যোগ্য জায়গায় বসাতে অনেক সময় যুদ্ধ করতে হয়। এ যুদ্ধ একদিন থামবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
তবে বর্তমানে নারীরা শিক্ষা ও চাকরিতে যোগদানের দিক থেকে যতটা এগিয়েছে, তাল মিলিয়ে উচ্চ পদে ততটা আসতে পারেনি বলে মনে করেন আলী ইমাম মজুমদার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এযাবৎ ১৮ জন নারী সচিব হয়েছেন। আর প্রথম নারী সচিবের নাম জাকিয়া আক্তার চৌধুরী। তিনি ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হয়েছিলেন।