'মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার রোহিঙ্গারা'

জাতিসংঘ দূত ইয়াংঘি লি
জাতিসংঘ দূত ইয়াংঘি লি

মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংঘি লি এবার স্পষ্ট করেই বলেছেন, মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গারা ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ শিকার। দেশটির রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনী ও পুলিশ তাদের ওপর ভয়ংকর নির্যাতন চালাচ্ছে। বিবিসির এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে গত নভেম্বরে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) বলেছিল, মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা ‘খুব সম্ভবত মানবতাবিরোধী অপরাধের’ শিকার। আর ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনেও বলা হয়, রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন সম্ভবত মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
অভিযোগের বিষয়ে দেশটির নেত্রী অং সান সু চির সাক্ষাৎকার নিতে চাইলে তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। তবে তাঁর দলের এক নেতা বলেছেন, যে অভিযোগগুলো তোলা হয়েছে, সেগুলো ‘অতিরঞ্জিত’ এবং এটা ‘আন্তর্জাতিক’ কোনো ইস্যু নয়, মিয়ানমারের ‘অভ্যন্তরীণ’ বিষয়। বিবিসিকে তিনি বলেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সেনাবাহিনীকে রোখার ক্ষমতা সু চির নেই।
বিবিসির অনুষ্ঠানে ইয়াংঘি লি বলেন, মিয়ানমারের সংঘাতময় সব এলাকায় তাঁকে যেতে দেওয়া হয়নি। পরে তিনি বাংলাদেশে এসে দেশ ছেড়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারেন, তিনি যা ভেবেছিলেন নির্যাতনের মাত্রা ‘তার চেয়েও ভয়াবহ’। তিনি বলেন, ‘আমি বলব এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ। বর্মি, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনী যা করছে, সেটা অবশ্যই মানবতাবিরোধী অপরাধ।’
ইয়াংঘি লি আরও বলেন, যে নির্যাতন হয়েছে, তা মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ‘পদ্ধতিগতভাবেই’ করছে। তবে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারেরও এর কিছুটা দায় নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘নিজেদের জনগণের ওপর তারা যে ভয়ংকর নির্যাতন চালিয়েছে এবং অত্যন্ত নিষ্ঠুর অপরাধ করেছে, দিনের শেষে তার জবাব বেসামরিক সরকারকেই দিতে হবে।’
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কাউন্সিলে আগামী সোমবার ইয়াংঘি লি তাঁর সাম্প্রতিকতম প্রাপ্ত তথ্য উপস্থাপন করবেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর যা ঘটে গেছে, তা তদন্তের জন্য সিরিয়া এবং উত্তর কোরিয়ায় নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিশনের মতো কমিশন গঠনের আহ্বান জানাবেন।
মিয়ানমারে গত বছর অক্টোবর মাসে সীমান্তবর্তী এক নিরাপত্তাচৌকিতে হামলার সূত্র ধরে রাখাইন রাজ্যে অভিযান শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর জাতিসংঘসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করে আসছে, রাখাইন রাজ্যের শত শত রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে, নারী ও শিশুরা ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার সরকার তদন্তও শুরু করেছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রাণ বাঁচাতে ৭০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।