চার আসন নিয়ে উদ্বেগ

সাতকানিয়া, বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড ও ফটিকছড়ি—চলতি বছরে এই চার সংসদীয় আসনে সহিংসতার মাত্রা ছিল ভয়াবহ। এখন এসব আসনে নির্বাচন। এ নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারাই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রামের আরও পাঁচ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জানা গেছে, ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর থেকেই এই চার উপজেলা সহিংস হয়ে ওঠে। সেই ধারাবাহিকতায় এখনো বিরোধী দলের যোকোনো কর্মসূচিতে অশান্ত হয়ে ওঠে সাতকানিয়া, বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড ও ফটিকছড়ি। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন—ফলে প্রশাসনের দুশ্চিন্তা বেশি।
নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও অবাধ করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ওই সভায় সাতকানিয়া ও বাঁশখালীর জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের এলাকায় নির্বাচনের সময় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বিষয়টি স্বীকার করে গত শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবগুলো আসনে আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা ব্যাপক থাকবে। তবে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম-১৫) যেহেতু প্রধান সড়কের ওপর তাই একটু গুরুত্ব বেশি দিতে হবে। তা ছাড়া সেখানে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘তবে কোনো আসনকে কম গুরুত্বের সঙ্গে দেখা যাবে না। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হতে পারে, এটা মাথায় রেখে আমরা নিরাপত্তা নিচ্ছি।’
সীতাকুণ্ড চট্টগ্রাম শহরের আসনের সঙ্গে থাকলেও এর নিরাপত্তাও সেভাবে নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। প্রসঙ্গত, সীতাকুণ্ডসহ নগরের তিনটি আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে সরঞ্জাম চট্টগ্রাম এসে পৌঁছেছে। নির্বাচনের দুই দিন আগে তা প্রতিটি সংসদীয় আসনে পৌঁছে দেওয়া হবে। চট্টগ্রামের নয়টি সংসদীয় আসনে মোট এক হাজার ৪৪টি ভোটকেন্দ্র এবং পাঁচ হাজার ৫৮৩টি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে নগরের তিনটি চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি), চট্টগ্রাম -১১ (বন্দর পতেঙ্গা) ও চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড আংশিক) এর কেন্দ্রসংখ্যা ৩৩৩টি। এসব কেন্দ্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের বিশেষ শাখার সহকারী কমিশনার কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ আছে কি নেই বুঝি না, আমরা সবগুলো কেন্দ্রকে সমান গুরুত্ব দেব। সবখানে একই ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। তবে কী পরিমাণ ফোর্স থাকবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। নির্বাচন কমিশনের চাহিদা এবং নিজেদের আলাপ-আলোচনায় সেটা নির্ধারণ করা হবে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, নগরের চেয়েও বেশি গুরুত্ব পাবে উপজেলার আসনগুলো। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৫ জনের মতো পুলিশ-আনসার থাকবে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
এ ছাড়া কোনো স্থানে দুই কিংবা তিনটি কেন্দ্র মিলে থাকবে একটি করে ভ্রাম্যমাণ দল। চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া, লোহাগাড়া), চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) ও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের দিকে আলাদা দৃষ্টি থাকবে।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইলতুৎ মিশ বলেন, ‘আমরা সবগুলোকে সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। সহিংসতাসহ সবকিছু মিলিয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হবে। মোবাইল দলের পাশাপাশি, র‌্যাব, বিজিবিও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে।’
এদিকে ২৬ ডিসেম্বর থেকে সেনাবাহিনীর টহল শুরু হয়েছে। দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে (চট্টগ্রাম-৩) অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে কোস্টগার্ড নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বলে জানা গেছে। এর বাইরে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) ও চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাকি সাতটি আসনে একক প্রার্থী হওয়ায় ভোট গ্রহণের প্রয়োজন হচ্ছে না।