১০ কিমি সংস্কার হয়নি এক বছরেও

ডিমলার টুনিরহাট থেকে জলঢাকার ভাদুর দোড়গাহ্ পর্যন্ত সড়কের সংস্কারকাজের ধীরগতিতে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ছবিটি গত মঙ্গলবার বিকেলে সড়কের কালীগঞ্জ ব্যারাজ এলাকা থেকে তোলা l প্রথম আলো
ডিমলার টুনিরহাট থেকে জলঢাকার ভাদুর দোড়গাহ্ পর্যন্ত সড়কের সংস্কারকাজের ধীরগতিতে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ছবিটি গত মঙ্গলবার বিকেলে সড়কের কালীগঞ্জ ব্যারাজ এলাকা থেকে তোলা l প্রথম আলো

নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার টুনিরহাট থেকে জলঢাকা উপজেলার ভাদুর দোড়গাহ্ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারকাজের ধীরগতিতে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। নির্ধারিত সময়ে কাজের এক-তৃতীয়াংশও সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে গত মঙ্গলবার ওই সড়কে গিয়ে দেখা যায়, ডিমলার টুনিরহাট থেকে জলঢাকার ভাদুর দোড়গাহ্‌ পর্যন্ত ১৫ ফুট রাস্তার সংস্কারকাজ চলছে বছরখানেক ধরে। এর মধে৵ টুনিরহাট থেকে ডিমলা উপজেলা শহরে ঢোকার মুখ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ডিমলা শহরে ঢোকার মুখ থেকে জলঢাকার ভাদুর দোড়গাহ্ পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তা এখনো খানাখন্দে ভরা। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, রাস্তাটি সংস্কারের জন্য প্রায় এক বছর ধরে ভেঙে রাখা হলেও কাজ করছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে চলাচলের ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ওই পথের যাত্রী ও পথচারীরা। ঘটছে দুর্ঘটনাও। ভাঙা রাস্তার কারণে যান চলাচলও সীমিত হয়ে পড়েছে। দু-একটি মালবাহী পিকআপ, ট্রাক্টর, ইজিবাইক যখন চলছে, ধুলায় ঢেকে যাচ্ছে চারদিক।

ডিমলা সদর ইউনিয়নের হাইস্কুল পাড়ার চিত্তরঞ্জন রায় (৪৫) বলেন, ‘এক বছর থাকি কাম চলেছে। রাস্তা খালি ভাঙায় হয়েছে, ভালো আর হয় না। রাস্তাটার অবস্থা দেখি মনে হয়েছে, এটা দেখার মানুষ নাই। থাইকলে এতদিন নাগিল না হয় (লাগত না)।’

১০ চাকার মালবাহী ট্রাক নিয়ে কুষ্টিয়া থেকে ওই পথে ডিমলা শহরে ঢুকছিলেন ট্রাকচালক জাকির হোসেন (৩৫)। কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ডিমলা একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। মালামাল নিয়ে প্রতি মাসে কয়েকবার আমাদের আসা-যাওয়া করতে হয়। কিন্তু এই রাস্তায় ট্রাক চালানো খুবই কষ্টের। গাড়ি নষ্ট হয়। ভাঙা রাস্তার কারণে ভাড়া বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ায় লোকসানও গুনতে হয়।’

ডিমলা উপজেলার নাউতরা বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম হাবিব চৌধুরী (৪৫) বলেন, ‘আমাদের প্রায় সময়ই ডিমলা উপজেলা শহরে যাওয়া-আসা করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরেই এই ভাঙা রাস্তা দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে। এই সড়কের দুরবস্থার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনাও ঘটছে। প্রায় এক বছর আগে কাজ শুরু করতে দেখেছি। কিন্তু এখন কাজের অগ্রগতির কোনো নমুনাও দেখা যাচ্ছে না।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি উপজেলা শহরের মূল সড়কের এ অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাসুমা বেগমের প্রতিনিধি মাহমুদ আলী বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে কাজ শুরু করা হলেও গত বর্ষায় কাজ করা সম্ভব হয়নি। এখন পর্যন্ত যে ১২ ফুট প্রশন্ত করা হবে, সেটুকুর ৫ কিলোমিটার এবং যে অংশটুকু ১৮ ফুট প্রশস্ত করতে হবে, তার ১০ কিলোমিটারের কাজ প্রায় শেষ। আগামী জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা আছে আমাদের।’

নীলফামারী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম হামিদুর রহমান বলেন, সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজটি সম্পাদনের জন্য ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর রংপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাসুমা বেগমকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের জুনে। কিন্তু কাজের পরিধি বাড়ায় বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য কিছুটা সময় লেগেছে। বর্তমানে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা করে কাজটি সম্পাদনের জন্য সময়সীমা দেওয়া আছে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত।

এ বিষয়ে নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার সড়কটির সংস্কারকাজের ধীরগতির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘সড়কটি সংস্কারের ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এবং সওজ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এ জন্য আমি সওজ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে একাধিকবার কথাও বলেছি। কিন্তু অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি দেখছি না। প্রায় এক বছরে তাদের কাজের তিন ভাগের এক ভাগও শেষ হয়নি।’