৪৮ ঘণ্টার দায়িত্ব পাওয়া কমিটিতেই আড়াই বছর

নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য ৪৮ ঘণ্টার দায়িত্ব পাওয়া বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগ আড়াই বছর পার করেছে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি আর হয় না।
দলীয় সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৪ জুন পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন শেষে ওই দিন সন্ধ্যায় পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু সম্মেলনের আড়াই বছর পরও কমিটি আর ঘোষণা করা হয়নি। এতে ৪৮ ঘণ্টার জন্য দায়িত্ব পাওয়া দুই ব্যক্তি আড়াই বছর পার করে ফেলায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোন্দল ও চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ওই সম্মেলনে উপস্থিত তৃণমূলের নেতা-কর্মীসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সর্বশেষ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পাথরঘাটায় দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের কমিটি না থাকায় দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে ত্যাগী ও যোগ্য নেতারা দলে স্থান পাচ্ছেন না, যার প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
জানতে চাইলে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সাংগঠনিক সম্পাদক ও অনুসন্ধান কমিটির সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, অনুসন্ধান কমিটির সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের একাধিক বৈঠক হয়েছে। যোগ্য নেতাদের নেতৃত্বে অচিরেই কমিটি দেওয়া সম্ভব হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্তত সাতজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সনের ২৪ জুন উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পাথরঘাটা কলেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরগুনা-১ আসনের সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। দিনব্যাপী ওই সম্মেলনের কাউন্সিল শেষে সন্ধ্যায় পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধান অতিথি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। এর আগে প্রধান অতিথির অনুরোধে চারজন সভাপতি ও ছয়জন সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী তাঁদের প্রার্থিতা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করে নেন। ওই ৪৮ ঘণ্টা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন যথাক্রমে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. বেলায়েত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন। ওই ঘোষণার আড়াই বছর পরও উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটির তথ্যে দেখা গেছে, মো. গোলাম কবীরকে সভাপতি ও মো. আলমগীর হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬৭ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটি ২০০৩ সালের ৩ জুলাই বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। বর্তমানে এ কমিটির দুজন সহসভাপতিসহ ১১ ব্যক্তি মারা গেছেন। আরেকজন সদস্য সাবেক সাংসদ গোলাম সরোয়ার হিরু দল পরিবর্তন করে ইসলামী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়া ওই কমিটির সভাপতিসহ প্রায় ১৮ জন সদস্য এখন নিষ্ক্রিয় রয়েছেন।
এমন একজন নিষ্ক্রিয় সহসভাপতি প্রকৌশলী আবদুল হালিম। তিনি বলেন, ‘মূলত আড়াই বছর আগে সম্মেলনের পর কমিটি না দেওয়ায় আমি দলে নিষ্ক্রিয়। তবে একটানা ২১ বছর দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। দলের প্রয়োজনে আবারও কাজ করতে আগ্রহী।’
রায়হানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অহিদ মুরাদ, কাকচিঁড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গৌতম সাহা, কালমেঘা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি অসীম কুমার রাখাল ও হরিণঘাটা পর্যটনকেন্দ্র ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর আলমসহ কয়েকজন নেতা বলেন, সাড়ে ১৩ বছর আগের কমিটিতে প্রায় সবাই এখন জ্যেষ্ঠ ও নিষ্ক্রিয় সদস্য। কমিটি ঘোষণা না করায় ত্যাগী, যোগ্য ও তরুণ নেতারা উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘এখন আর ভারপ্রাপ্তও নই, আছি দায়িত্বপ্রাপ্ত। তবে কমিটি না থাকায় কোনো সভা আহ্বান করা যাচ্ছে না। এতে দলীয় কার্যক্রম অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও অনুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, ‘পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি দ্রুত দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের রয়েছে। এ বিষয় অনুসন্ধান কমিটি কাজ করছে। অচিরেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হবে।’