ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য বিসিএস পরীক্ষার পদ্ধতি শিথিল করার দাবি

কর্মশালায় বক্তব্য দিচ্ছেন চাকমা সার্কেল প্রধান দেবাশীষ রায়। ছবি: প্রথম আলো
কর্মশালায় বক্তব্য দিচ্ছেন চাকমা সার্কেল প্রধান দেবাশীষ রায়। ছবি: প্রথম আলো

সরকারি চাকরিতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রার্থীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকলেও বিসিএসের নিয়োগে ৮৭ শতাংশ পদই পূর্ণ হয় না। কোটা সংরক্ষণের প্রকৃত সুবিধা দিতে বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরীক্ষার্থীদের জন্য শর্ত শিথিল করা উচিত। 

‘বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত কোটাপদ্ধতির নীতি’সংক্রান্ত কর্মশালায় তুলে ধরা গবেষণায় এ কথা বলা হয়। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর এক হোটেল আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন চাকমা সার্কেল প্রধান দেবাশীষ রায়। এ গবেষণায় তিনি সরকারি চাকরিতে নিয়োগের বিধি, এ-সংক্রান্ত সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক আইন, বিভিন্ন বিসিএস পরীক্ষায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রার্থীদের নিয়োগের চিত্র, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারি নিয়োগে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য দেওয়া সুবিধার বিষয়গুলো তুলে ধরেন। আইএলওর এক গবেষণার ফল তুলে ধরে দেবাশীষ রায় বলেন, ২৪ থেকে ৩৩তম বিএসএস পরীক্ষায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য রাখা মাত্র ১৩ শতাংশ পদ পূর্ণ হয়েছে। এর ফলে এসব জাতিগোষ্ঠী একধরনের বঞ্চনার শিকার হচ্ছে।
ভারত ও নেপালের আইন তুলে ধরে দেবাশীষ রায় বলেন, ভারতে পরীক্ষায় শুধু নয়, নিয়োগ-বদলি-প্রমোশনের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত গোষ্ঠীর কোটানীতি অনুসরণ করা হয়। এর জন্য প্রয়োজনীয় আইনি রক্ষাকবচ রয়েছে। এমনকি কোনো পরীক্ষায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কোটা পূর্ণ না হলে পরবর্তী সময়ে তা সমন্বয় করা হয়।
রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রার্থীদের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা সাধারণ পরীক্ষার্থীদের মতোই নেওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের নম্বরের ক্ষেত্রে কিছু শিথিলতা দেখানো দরকার। এ ছাড়া মৌখিক পরীক্ষায় এসব জাতির ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য হানিকর বিষয় যেন জিজ্ঞাসা না করা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
কর্মশালার প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কোটার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে প্রয়োজনে আইনের পরিবর্তন করতে হবে। এসব জাতির মানুষ রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, সব ধরনের কোটা নিয়েই সমস্যা আছে। সরকারি কর্মকমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মেধাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী যাতে আরও সুবিধা পায়, সে ক্ষেত্রে তাদের জন্য শিক্ষার সুযোগ আরও প্রসারিত করার দিকে গুরুত্ব দেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার সভাপতিত্বে কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন সরকারি কর্মকমিশনের সচিব আকতারী মমতাজ, আইএলওর বাংলাদেশ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গগন রাজভাণ্ডারী প্রমুখ।