আ.লীগ প্রার্থীদের বাছাই নিয়ে বিতর্ক

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া, শ্রীরামকাঠী ও দেউলবাড়ী দোবরা ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

কলারদোয়ানিয়া ও শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নে প্রার্থী মনোনয়নে তৃণমূলের মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। অপর দিকে দেউলবাড়ী দোবরা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়ালি উল্লাহর বিরুদ্ধে অতীতে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওয়ালি উল্লাহর বাবা ও চাচা স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৬ এপ্রিল নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া, শ্রীরামকাঠী ও দেউলবাড়ী দোবরা ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। তবে প্রার্থী মনোনয়নে তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলাউদ্দিন বাহাদুর। এ ইউনিয়নে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য তৃণমূলের ভোটে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নান্না মিয়া সর্বোচ্চ ১১ ভোট পেয়েছিলেন। তাঁকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয় ৩ ভোট পাওয়া আলাউদ্দিন বাহাদুরকে।

কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নান্না মিয়া বলেন, ‘তৃণমূলের ভোটে আমি সর্বোচ্চ ভোট পাই। এ ছাড়া দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী আমার পক্ষে থাকার পরও আমি মনোনয়ন না পাওয়ায় নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়েছেন।’

শ্রীরামকাঠী ইউপির চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি উত্তম কুমার মৈত্র। এ ইউনিয়নে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য তৃণমূলের ভোটে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও শ্রীরামকাঠী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আবদুল মালেক ব্যাপারীর ছেলে মিজানুর রহমান ১৯ ভোটের মধ্যে ১৫ ভোট পান। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুনীল কুমার ও সদস্য সুখদেব হালদার দুটি করে ভোট পান।

শ্রীরামকাঠী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তৃপ্তি রঞ্জন রায় অভিযোগ করেন, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য উত্তম কুমার মৈত্র তৃণমূলের ভোটে প্রার্থী ছিলেন না। এমনকি স্থানীয় তৃণমূলের ভোটে মনোনয়নের জন্য আবেদনও করেননি। এমন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ায় নেতা-কর্মীরা ব্যথিত হয়েছেন।

উত্তম কুমার মৈত্র বলেন, ‘প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য তৃণমূলের ভোট গ্রহণের ব্যাপারে আমাকে জানানো হয়নি। গোপনে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে।’

উপজেলার দেউলবাড়ী দোবরা ইউনিয়নে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ালি উল্লাহ। তিনি একসময় যুদ্ধাপরাধ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর অনুসারী ছিলেন।

নাজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারেফ হোসেন খান বলেন, ওয়ালি উল্লাহর বাবা মাওলানা মফিজুর রহমান দেউলবাড়ী দোবরা ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর চাচা মীম ফজলুর রহমান ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন ও ১৯৯৬ সালে নেছারাবাদ-বানারীপাড়া আসনে জামায়াতের দলীয় প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। এক বছর আগে ওয়ালি উল্লাহ আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য হয়েছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হাকিম হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের পাঠানো তালিকা আমলে না নিয়ে দলীয় মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ায় নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।’

তবে ওয়ালি উল্লাহ বলেন, তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।