হাসপাতালের বারান্দায় কাতরাচ্ছেন ফাতেমা

মোছাম্মদ ফাতেমা (২০) নামের এক তরুণীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনা ঢাকায় ঘটলেও ফাতেমাকে ভর্তি করা হয়েছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। সেখানে বারান্দায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি।
জানতে চাইলে বার্ন ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার ফরিদ উদ্দিন বলেন, ফাতেমার শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাঁর খাদ্যনালি, পাকস্থলী ও ফুসফুস মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ফাতেমার বাড়ি বাগেরহাটের মোংলা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিগন্যাল টাওয়ার এলাকায়। বাবা মো. মোজাম সরদার মোংলা ঘাটের মাঝি। সাত ভাই-বোনের মধ্যে ফাতেমা চতুর্থ। ফাতেমাকে বাসায় কাজ করার জন্য গত বছরের আগস্টে তাঁর মামাতো বোন সালমা বেগম ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানেই গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ফাতেমা অগ্নিদগ্ধ হন।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, বার্ন ইউনিটের বারান্দায় ফাতেমা শুয়ে আছেন। তাঁর মুখমণ্ডল থেকে শুরু করে কোমর পর্যন্ত ব্যান্ডেজ। শুধু চোখ দুটো ও মুখ খোলা। থেমে থেমে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কাপড় কাচার সময় এক কাপড়ের রং অন্য কাপড়ে লেগে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর মামাতো বোন সালমা তাঁর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সালমা বেগম বলেন, ফাতেমা তাঁর মায়ের সঙ্গে রাগারাগি করে নিজেই শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে ফাতেমার মায়ের অনুরোধেই তাঁকে খুলনায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর চিকিৎসার সব খরচ তাঁরা দিচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় হাসপাতালে দেখাশোনা করার মতো কোনো লোক নেই। এ কারণে ফুফুকে (ফাতেমার মা) ঢাকায় আসতে বলি। কিন্তু তিনি আসতে পারবেন না বলে জানান। তাই তাঁদের অনুরোধে অ্যাম্বুলেন্সে করে খুলনায় হাসপাতালে ভর্তি করে আমি ঢাকায় চলে এসেছি।’
ফাতেমার মা মাহফুজা বেগম বলেন, গত বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে সালমা মুঠোফোনে বলেন, ফাতেমার শরীরে আগুন লেগেছে। এ জন্য তাঁকে ঢাকায় যেতে হবে। কিন্তু তখন তাঁর ঢাকায় যাওয়ার কোনো প্রস্তুতি ছিল না। এ কারণে যেতে পারেননি। সন্ধ্যার দিকে আবার মুঠোফোনে তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলেন সালমা। ওই ইউনিটের কয়েকজন নার্স বলেন, মোংলায় নিজ বাড়িতে আগুন লেগেছে জানিয়ে ফাতেমাকে এখানে ভর্তি করা হয়। এ ধরনের মারাত্মক দগ্ধ রোগীকে সাধারণত ঢাকায় পাঠানো হয়। কিন্তু ভর্তির সময় রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজনের (সালমা) অনুরোধে ফাতেমাকে এখানে ভর্তি করা হয়েছে।
ফাতেমার বাবা মোজাম সরদার বলেন, ‘ফাতেমার অবস্থা যে এত খারাপ, তা জানতাম না। আমাদের জানানো হয়েছিল সামান্য পুড়ে গেছে।’