হবিগঞ্জে নদী সেচে মাছ শিকার, সংকটে কৃষক

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় বাগহাতা নদী সেচযন্ত্রের সাহায্যে শুকিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এ কারণে পানির সংকটে পড়েছেন কৃষক। তাঁরা প্রায় এক হাজার একর ধানখেতে সেচ দিতে পারছেন না।

এ ঘটনায় বানিয়াচং উপজেলার বাগহাতা গ্রামের মো. আসক আলী নামের এক কৃষক ১১ মার্চ হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা হাকিমের আদালতে মামলা করেছেন।

এজাহার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বাগহাতা নদী কুশিয়ারা নদীর একটি শাখা। উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের ভেতর দিয়ে এ নদীটি প্রবাহিত হয়েছে। গত বছর এ শাখানদীটি মাছ চাষের জন্য ইজারা নেয় জোনাকি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। চলতি মাসের শুরুতে নদীর প্রায় এক কিলোমিটার জায়গার দুই প্রান্তে বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর সেচযন্ত্র দিয়ে নদীর পানি শুকিয়ে মাছ শিকার করা হয়। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ওই এলাকার কৃষিকাজ।

মামলার বাদী আসক আলী প্রথম আলোকে বলেন, জোনাকি মৎস্যজীবী সমিতির লোকজন তথ্য গোপন করে অন্যায়ভাবে ‘নদীকে জলাশয় দেখিয়ে’ ছয় বছরের জন্য নদী ইজারা নিয়েছেন। এখন নদীর পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এলাকার কৃষক তাঁদের প্রায় এক হাজার একর বোরো খেতে পানি দিতে পারছেন না। এ কারণে তিনি ইজারাদার ওই সমিতির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

এলাকার কৃষক আলী বলেন, বাগহাতা নদীর পানি শুকিয়ে নেওয়ায় এলাকার চমকপুর, বাগহাতা, গাজীপুর, শান্তিপুর, মাকালকান্দিসহ ছয়-সাতটি গ্রামের কৃষিকাজ, গোসলসহ দৈনন্দিন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এ মানুষগুলো এ নদীর ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, নদীর প্রবাহ বন্ধ করা বা নদী ইজারা দেওয়ার কোনো বিধান নেই। এ প্রক্রিয়া চললে পানির স্তর নিচে নেমে যাবে। তবে বাগহাতা নদী প্রশাসন কোন বিবেচনায় এ মৎস্য সমবায় সমিতিকে ইজারা দিল, তা তাঁদের কাছে পরিষ্কার নয়। তাঁরা সরেজমিনে ঘটনাস্থলে যাবেন এবং গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এর প্রতিবাদ করবেন।

জোনাকি মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তাঁরা কেউ ফোন ধরেননি। তবে এ সমিতির সদস্য মো. হারুন মিয়া বলেন, মাছ ধরার সুবিধার্থে তাঁরা বাঁধ দিয়ে নদী শুকিয়েছেন। প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলেই বাঁধ কেটে দেওয়া হবে। এ বাঁধের কারণে কৃষির ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। কৃষকেরা আবার তাঁদের খেতে সেচ দিতে পারবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সন্দ্বীপ কুমার সিংহ বলেন, তিনি এ অভিযোগ পেয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের তহশিলদারকে নির্দেশ দিয়েছেন সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য। প্রতিবেদন পাওয়ার পর তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নদীটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারাসংক্রান্ত কোনো নথিপত্র তাঁর কাছে নেই।