আত্ম-অনুসন্ধানের গল্প 'প্রতিদিন একদিন'

পাঁচ বন্ধু রফিক, আজমল, এরশাদ, মুনিরা ও ফিরোজ। ১৯৭১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সবাই একসঙ্গে অংশ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধ–পরবর্তী যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ১২ বছর পর বন্ধু রফিকের বাসায় হাজির হয় তারা যুদ্ধের একটি বিশেষ দিন ১২ নভেম্বর উদ্যাপন করবে বলে। কিন্তু সেই উদ্যাপনই এক সময় পরিণত হয় আত্ম-অনুসন্ধানে। যে চেতনা নিয়ে যুদ্ধ করেছিল তাঁরা সেই আদর্শ কি টিকেছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার পর? সাঈদ আহমদ রচিত প্রতিদিন একদিন নাটক সেই প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় দর্শককে।
২৬ মার্চ সন্ধ্যায় নগরের মোমিন রোডের কদম মোবারক এম ওয়াই উচ্চবিদ্যালয় মিলনায়তনে সমাজ সমীক্ষা সংঘের উদ্যোগে আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মঞ্চস্থ হয় এই নাটক। নাটকে অভিনয় করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। নির্দেশনায় ছিলেন নাট্যকলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মু. ইমরান হোসেন।
মুক্তিযুদ্ধের বীরগাথা নিয়ে রচিত নাটকের চেয়ে ‘প্রতিদিন একদিন’ পুরোপুরি ভিন্ন। প্রচলিত নাটকের কাঠামোর ভেতরে যে শুভ-অশুভের দ্বন্দ্ব অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা বনাম পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাঁদের দোসর রাজাকারের সংঘাত উপস্থিত করা হয়, তা এই নাটকে তেমনটি দেখা যায়নি। প্রচলিত ন্যারেটিভ থেকে বের হয়ে এসে নাট্যকার এক ভিন্ন ভাষ্য তৈরি করেছেন। যেখানে একসময় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া মানুষজনই নিজেদের ভেতরের মানুষটির মুখোমুখি হয়।
নাটকের প্রথম দৃশ্যে দেখা যায়, রফিকের বাড়ি এসে সব বন্ধু সিদ্ধান্ত নেয় যুদ্ধ দিনের স্মৃতিচারণা করবে তারা। তবে কোনো কথা গোপন করবে না কেউ কারও কাছ থেকে। দলের সদস্য মুনিরাকে দিয়ে শুরু হয় স্মৃতিচারণার পর্ব। সে জানায়, যুদ্ধর সময় এক অপারেশন শেষে উত্তেজনায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল এরশাদ। তখন তার প্রচণ্ড জ্বর আসে আর প্রলাপ বকতে থাকে। পাশে থাকা মুনিরা শুনতে পায় এরশাদ জ্বরের ঘোরে দলের অন্য সদস্যদের মৃত্যু কামনা করছে। মুনিরার এই কথায় পাল্টে যায় পরিবেশ। দলের প্রত্যেক সদস্য নিজেদের মেলে ধরতে থাকে একে একে। জানা যায়, যুদ্ধে পরবর্তী সময়ে সবারই মোহভঙ্গ হয়েছে। যে দেশের জন্য লড়াই করেছিল, সেই সেই দেশ অর্জিত হয়নি। ব্যক্তি জীবনে সুখী নয় কেউ। হতাশা থেকে কেউ নীতিহীন ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়েছে। তবে শেষে এসব থেকে বেরিয়ে আবার নতুনভাবে সবকিছু শুরু করতে চায় সবাই।
নাটকের রফিকের চরিত্রে মামুনুল হক, আজমল চরিত্রে মো. মাহমুদল হক, এরশাদ চরিত্রে রাব্বানী ফজল, মুনিরা চরিত্রে দীপা চৌধুরী অনবদ্য অভিনয় করেছেন। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় ও নেপথ্যে ছিলেন আবীর মণ্ডল, মেহেরুন রাবীবা, মো. রায়হান ও তুষার।