মামলা ও কোন্দলে বিপর্যস্ত শেরপুর জেলা বিএনপি

পুলিশের করা মামলা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে শেরপুর বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে হরতাল-অবরোধসহ সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি জোরদার করতে পারছেন না দলটির নেতা-কর্মীরা। কোন্দলের কারণে গত ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসের পূর্বঘোষিত কর্মসূচিও বাতিল করে দলটি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চারদলীয় জোট সরকারের আমল থেকেই জেলা বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বিরাজ করছে। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুরের তিনটি আসনেই চারদলীয় জোটের প্রার্থীরা পরাজিত হন। এতে দলের সাংগঠনিক ভিত নড়বড়ে হয়ে যায়। ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন সময় শেরপুরে বিএনপির বহু নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করে। গত তিন বছরে পুলিশের মামলায় দলের দুই শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। হয়রানি ও গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কায় অনেক নেতা-কর্মী এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করেন। এতে সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। সর্বশেষ গত ২৪ নভেম্বর গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে পুলিশ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতিসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, বিএনপি শেরপুর-১ (সদর) আসনটি জোটের শরিক জামায়াতকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু জামায়াতের জ্যেষ্ঠ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান দুবার পরাজিত হওয়ায় এই আসনে বিএনপির প্রার্থী দেওয়ার দাবি ওঠে। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ছাইফুল ইসলাম কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে এ দাবি জানান। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তাঁর মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির পদ নিয়ে দলের দুই সহসভাপতি আবদুর রাজ্জাক ও সাইফুল ইসলামের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে আবদুর রাজ্জাককে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১৯ মার্চ সাইফুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। এর প্রতিবাদে জেলা বিএনপির একাংশের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুর রাজ্জাক ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হককে শেরপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। ফলে জেলা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নেয়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
এর আগে শেরপুর সদর উপজেলার চরজঙ্গলদী গ্রামের বাসিন্দা শিল্পপতি হযরত আলীর যোগদান নিয়ে দলে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুর রাজ্জাক ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক হযরত আলীকে দলে স্বাগত জানান। কিন্তু সহসভাপতি (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম, শহর বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক, কৃষক দলের সভাপতি আমিনুল ইসলাম, যুবদলের সভাপতি শফিকুল ইসলাম, শ্রমিক দলের সভাপতি শওকত হোসেনসহ জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের
নেতা-কর্মীরা তাঁর (হযরত আলী) বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, দলে হযরত আলীর যোগদান এবং সহসভাপতি সাইফুল ইসলামের সাময়িক বরখাস্তের বিষয় নিয়ে জেলা বিএনপি এখন দ্বিধাবিভক্ত। এক পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। অন্য পক্ষে আছেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি তৌহিদুর রহমান ও সাইফুল ইসলাম।
কোন্দলের বিষয়টি সরাসরি স্বীকার না করে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক বলেন, দলে কোনো কোনো নেতার মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে গত তিন বছরে পুলিশের দায়ের করা ৩৮টি মামলায় বিএনপির দুই শতাধিক নেতা-কর্মী হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেকে আদালত থেকে জামিন না পেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তার পরও পুলিশি বাধার মুখেও তাঁরা হরতালসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রয়েছেন।
সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলা বিএনপির কোনো নেতা বা সদস্যকে দল থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার এখতিয়ার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেই। এটি অগণতান্ত্রিক ও গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী। তিনি অবিলম্বে তাঁর বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান। তিনি দাবি করেন, শেরপুর জেলা বিএনপি এখন দ্বিধাবিভক্ত। দলের জেলা কমিটির ১০১ সদস্যের মধ্যে ৭৩ জন তাঁর সঙ্গে আছেন।