সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ১৮ প্রস্তাব

চুয়াডাঙ্গায় নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে অবৈধ যান উচ্ছেদসহ ১৮টি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এসব প্রস্তাব সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের পরবর্তী সভায় উপস্থাপন ও অনুমোদনের পর পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনসে ‘নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন। চুয়াডাঙ্গার জয়রামপুরে ট্রাক ও ভটভটির মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৩ জনের মৃত্যুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাফিক পুলিশ এই সভার আয়োজন করে।

জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধসহ নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে সভায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া ১৮টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন সভার সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে নছিমন, করিমন ও আলমসাধু (ভটভটি) আঞ্চলিক পাঁচটি মহাসড়কে চলতে পারবে না, অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন, পাশ কাটানো (ওভারটেকিং) ও অতিরিক্ত গতি প্রতিরোধ করতে হবে। অবৈধ যানবাহনে মানুষের চলাচল বন্ধে প্রচারণা চালাতে হবে। দুর্ঘটনাকবলিত সড়ক চিহ্নিত করে সড়ক সম্প্রসারণ, বিভাজকসহ প্রয়োজনীয় উন্নয়ন করতে হবে। সড়কে গরু-ছাগল চলাচল বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে। সড়কে মানুষ পারাপারের জায়গাগুলো উজ্জ্বল রং দিয়ে স্পষ্টাকারে জেব্রাক্রসিং তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হবে। যাত্রীছাউনি ও নির্ধারিত বাসস্ট্যান্ড ছাড়া যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো যাবে না। মোটরসাইকেলের চালকদের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেলচালকদের কাছে জ্বালানি বিক্রি বন্ধ করতে হবে। সড়কের ওপর বাড়িঘর তৈরির নির্মাণসামগ্রী রাখা যাবে না। প্রধান সড়কগুলোর ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে। মূল সড়কে অটোরিকশা চলতে দেওয়া যাবে না, এ জন্য জেলার চারটি পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে অটোরিকশা চলাচলের রাস্তা ঠিক করে দিতে হবে। সড়কের ওপর থেকে হাটবাজারগুলো সরিয়ে নিতে জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদকে উদ্যোগ নিতে হবে। যেসব ইটভাটা রাস্তার পাশে মাটির স্তূপ তৈরি করে রেখেছে, সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে। ইটভাটার গাড়ি রাতে নির্ধারিত সময়ে চলাচল করতে গিয়ে রাস্তায় মাটি পড়লে কাদা হওয়ার আগেই তা ভাটার মালিকদের সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রচলিত আইনকানুন বিষয়ে ধারণা দিতে চালকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করতে হবে। এসব বাস্তবায়নে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের যৌথ আলোচনা ও সমস্যা বাস্তবায়নে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

সভায় জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. জসিম উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. তরিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস ও বিআরটিএ চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সার্কেলের পরিদর্শক এস এম সবুজ। আরও বক্তব্য দেন জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক রিপন মণ্ডল; জেলা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার, এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রফিকুজ্জামান ও চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম। সভায় ইটভাটা মালিক সমিতি, পরিবেশক সমিতি, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মাছ ব্যবসায়ী সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে মতামত দেন। বক্তাদের সবাই সড়ক থেকে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধে একমত পোষণ করেন।

মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাংসদ আলী আজগরের সঙ্গে আলাপ করেই এই সভা আহ্বান করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় হতাহত ঠেকাতে এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নে জনসচেতনতা বাড়াতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।