বিস্ফোরক ভেবে যা হলো...

দুপুরের কর্মব্যস্ত বনানী এলাকা। অসংখ্য যানবাহন আর পথচারীর আসা-যাওয়া চলছে। ঠিক এই সময় বনানী ৭ নম্বর সড়কে থানার সামনে বিকট শব্দ। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। শুরু হয় সবার দিগ্বিদিক ছোটাছুটি। এ তো গেল ঢাকার খবর। সিলেটের শাহী ঈদগাহ এলাকার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে পড়ে ছিল বোমাসদৃশ একটি কালো বস্তু। তাই নিয়েই শুরু হয় হুলুস্থুল। শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলকে খবর পাঠানো হয়।
রাজধানীর বনানীর ঘটনায় শব্দ শুনে প্রথমে সবাই ধরে নিয়েছিলেন হয়তো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। থানার সামনে থেকে শব্দ আসার কারণে আতঙ্কের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। চোখের পলকে পুলিশ, র্যা ব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ (এপিবিএন) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা হাজির হন। কয়েকটি ফাঁকা গুলিও ছোড়েন। ঘিরে ফেলেন আশপাশের এলাকা। বনানীর প্রায় সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় তল্লাশি। আশপাশের ভবনে খোঁজ নেওয়া হয়। বেশ কিছু সময় ধরে চলতে থাকে ‘হামলাকারী’ খুঁজে বের করার কাজ। কিন্তু কিছুতেই কিছু মিলছিল না। এ অবস্থায় বনানী থানার সামনে বিদ্যুতের লাইনের ট্রান্সফরমার থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। ট্রান্সফরমারের সঙ্গে থাকা বিদ্যুতের তারগুলোও পুড়ে গেছে। কিছু তার এলোমেলো হয়ে আছে। এ দৃশ্য দেখে খবর দেওয়া হয় বিদ্যুৎ বিভাগকে। সেখানকার কর্মীরা পরীক্ষা করে জানান, ট্রান্সফরমারটি বিস্ফোরিত হয়েছে। আর সেই শব্দই ছড়িয়ে পড়েছে।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরমান আলী প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরণের কারণে সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তবে, এ কারণে কেউ হতাহত হয়নি।
সিলেট নগরের শাহী ঈদগাহ এলাকার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে পড়ে ছিল বোমাসদৃশ একটি কালো বস্তু। এটি দেখেই স্থানীয় ব্যক্তিরা খবর দেন পুলিশে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ বস্তুটি বোমা কি না, তা নিশ্চিত হতে সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলকে খবর পাঠায়। পরে সেনাবাহিনী এসে নিশ্চিত হয়, বস্তুটি কোনো বোমা নয়। এটি স্কচটেপে মোড়ানো জর্দার খালি কৌটা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল নয়টায় স্থানীয় ব্যক্তিরা বোমাসদৃশ এই বস্তুটি দেখেন। বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে সেনাবাহিনী পর্যবেক্ষণ করে জানতে পারে, এটি একটি খালি কৌটা। আর এই ৭ ঘণ্টা ৪০ মিনিট স্থানীয় ব্যক্তিরা কাটান উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়। পুলিশ জানিয়েছে, সকাল নয়টায় ‘এনাম এন্টারপ্রাইজ’ নামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে স্থানীয় ব্যক্তিরা ওই বোমাসদৃশ বস্তুটি দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বস্তুটির আশপাশ এলাকা ক্রাইম সিন হিসেবে ঘিরে রাখে এবং স্থানীয় ব্যক্তিদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দেয়। এ ছাড়া ঝুঁকি এড়াতে শাহী ঈদগাহ-হাজারীবাগ গলির মুখ পর্যন্ত সড়কে যান চলাচলও বন্ধ করে দেয়।
সিলেট মহানগরের বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বস্তুটি বোমা ছিল না। কেউ আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য একটি জর্দার কৌটাকে বোমাসদৃশ হিসেবে ফেলে রেখেছিল।’