কর্মচারীরা আন্দোলনে বর্জ্যের স্তূপ বরিশালে

বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চার দিন ধরে আন্দোলন ও কর্মবিরতি পালন করছেন। ফলে নগরে বর্জ্য অপসারণ বন্ধ রয়েছে। ছোট-বড় সব সড়কে জমেছে ময়লার স্তূপ। দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে পড়েছে।
গত বুধ ও গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে নগরের ব্যস্ততম এলাকা সদর রোড, ফজলুল হক অ্যাভিনিউ, হাসপাতাল রোড, কালীবাড়ি রোড, আলেকান্দা এলাকায় সড়কের ওপর ময়লার স্তূপ চোখে পড়েছে। বাতাসে সেই বর্জ্য আশপাশের এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ছে। বাসাবাড়ির সামনেও বর্জ্যের স্তূপ। ভয়াবহ অবস্থা অশ্বিনীকুমার হলের সামনের সদর রোড, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের চারপাশ, নগর ভবনের চারপাশ, অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়, ব্রজমোহন কলেজ, পুরান বাজার, নতুন বাজার, বাংলা বাজার, বটতলা বাজার, চৌমাথা বাজার, রূপাতলী বাজার, সাগরদি বাজার, নথুল্লাবাদ বাজার এলাকায়।
নগর সৌন্দর্য রক্ষা আন্দোলনের সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকেরা বেতন পাচ্ছেন না, এটা কষ্টের বিষয়। কিন্তু বর্জ্য অপসারণ বন্ধ করে আন্দোলনে যাওয়া ঠিক হয়নি। এমনিতেই নগরের ময়লা-আবর্জনা অপসারণ সঠিকভাবে হয় না। আন্দোলনের কারণে পুরো নগর এখন ময়লার নগরে পরিণত হয়েছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
গত বুধবার দুপুর ১২টা­র দিকে নগর ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভবনের মূল ফটকে তালা দিয়ে সামনে বিক্ষোভ করছেন। এ সময় নগর ভবনে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সেবা নিতে আসা গ্রাহকদেরও ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। হুঁশিয়ারি দিয়ে বিক্ষোভকারীরা বলেন, দাবি না মানলে মেয়রসহ সবার বাড়ির সামনে ময়লার স্তূপ হবে। পুরো নগর অচল করে দেওয়া হবে।
আন্দোলনকারী নগর পরিসংখ্যানবিদ স্বপন কুমার দাস বলেন, বারবার কেবল আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এবার আর কোনো আশ্বাসে কাজ হবে না। পুরো বকেয়া দিতে হবে। আর এ ব্যাপারে মেয়র বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিনিধির মাধ্যমে সমঝোতা করতে হবে।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী শেখ কামাল বলেন, ‘আমরা চার দিন ময়লা পরিষ্কার করিনি। তাতেই নগরের এ অবস্থা হয়েছে। দাবি না মানলে সড়কসহ বাসাবাড়ির অবস্থাও এ রকম হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকৌশলী বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনে এক বছরে ৪০০ কোটি টাকার বাজেট হয়। অথচ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে প্রয়োজন মাত্র ৩০ কোটি টাকা। এ সময় করপোরেশনের থোক বরাদ্দও বেশি এসেছে। সেই অর্থ থেকেও বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া যেত।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় পানির সমস্যার কথা জানাতে নগর ভবনে আসেন পলাশপুর এলাকার মো. শাহ আলমসহ বেশ কয়েকজন। শাহ আলম অভিযোগ করেন, ‘তিন দিন ধরে পানি নেই। অভিযোগ দিতে এসে নগর ভবনে ঢুকতেই পারিনি।’ ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফরিদ খান বলেন, ‘কর দিতে এসেছিলাম। কিন্তু সবাই আন্দোলন করায় টাকা জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি।’
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাস নয়, দুই মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে। পরে আরও দুই মাসের বেতন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা কোনো কথা শুনছেন না। নাগরিকদের দুর্ভোগে ফেলে আন্দোলন করার অধিকার তাঁদের নেই।
মেয়র আহসান হাবিব কামাল বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া আছে দুই মাসের। তবে কিছু কর্মকর্তা ব্যক্তিস্বার্থে শ্রমিকদের উসকে দিয়েছেন। সেবা বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।