আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা, মার্কেট দুটির সামনে হকার বসেনি

চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় এলাকায় দুটি বিপণিবিতানের (মার্কেট) তাণ্ডবের ঘটনায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নিরাপত্তার জন্য সেন্ট্রাল প্লাজা ও সেন্ট্রাল শপিং কমপ্লেক্সের সামনে পুলিশের পাহারা ছিল। মার্কেট দুটির সামনের ফুটপাতে কোনো হকার বসেনি। তবে সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।
তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত সেন্ট্রাল শপিং কমপ্লেক্সের নিচতলার খাবারের দোকান ফুড ফেয়ার গতকাল বন্ধ ছিল। দুপুরে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সন্ত্রাসীরা দোকানের সব জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে। সব মেরামত করে দোকান চালু করতে দুই-এক দিন সময় লাগবে। তাণ্ডবের ঘটনায় ৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
ফুড ফেয়ারের পাশের মুদির দোকান নিত্যসামগ্রীর মালিক মো. ইমাম উদ্দিন বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা দোকানের সামনের অংশ ও ভেতরে রাখা ফ্রিজ ভাঙচুর করেছে। পেটের দায়ে এখানে ব্যবসা করতে এসেছি। আমরা বেশি কিছু চাই না, শুধু শান্তিতে ব্যবসা করতে চাই।’
ক্ষতিগ্রস্ত চশমার দোকান দৃষ্টিদানের মালিক জুলফিকার আলী বলেন, ‘আবার কখন হামলা হয়, ভাঙচুর হয়—এই নিয়ে সার্বক্ষণিক আতঙ্কে আছি। আমাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন।’
গত বুধবার দুপুর সোয়া একটার দিকে ৩০ থেকে ৪০ জন যুবক লাঠিসোঁটা হাতে অতর্কিতভাবে জিইসি মোড় এলাকার সেন্ট্রাল প্লাজা ও সেন্ট্রাল শপিং কমপ্লেক্স মার্কেটে এলোপাতাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। প্রায় ২০ মিনিটের মতো তাণ্ডব চালিয়ে বেশ কয়েকটি দোকান এবং গাড়ি ভাঙচুর করে দ্রুত পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। তাণ্ডবের প্রায় এক ঘণ্টা পর প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন মার্কেট দুটির ব্যবসায়ী ও দোকানের কর্মচারীরা। তাঁদের ধারণা, মার্কেট দুটির সামনের ফুটপাত ও হকারদের যাঁরা নিয়ন্ত্রণ করেন, তাঁরা এই ভাঙচুর করেছেন। হামলাকারীরা যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসী। জিইসি মোড়ে বিপণিবিতান দুটির অবস্থান পাশাপাশি।
এদিকে গতকাল দুপুরে জিইসি মোড়ের একটি রেস্তোরাঁয় সেন্ট্রাল প্লাজা, সেন্ট্রাল শপিং কমপ্লেক্স এবং ও আর নিজাম রোড ব্যবসায়ী সমিতি, পুলিশ ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ব্যবসায়ীরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন। বিপণিবিতানগুলোর সামনে যাতে হকার বসতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। দাবি পূরণে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেছে পুলিশ।
স্থানীয় ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন বলেন, তাণ্ডবের ঘটনায় এখনো ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাঁদের আতঙ্ক দূর করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ করা হবে।
সেন্ট্রাল প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহমদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন প্রথম আলোকে জানান, তাণ্ডবের ঘটনায় সমিতির পক্ষ থেকে আপাতত কোনো মামলা করা হবে না। কারণ, হামলাকারীদের তাঁরা চেনেন না। পুলিশ এ ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। পুলিশই আইনি ব্যবস্থা নেবে। তাণ্ডবের ঘটনায় প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তাঁরা।
তবে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরাই মামলা করবেন। জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি জানান, বিপণিবিতানের সামনে হকার বসুক, তা ব্যবসায়ীরা চান না। তাঁদের দাবির যৌক্তিকতা আছে।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল হুদা বলেন, জিইসি মোড়ের বিপণিবিতানের সামনে আর কোনো হকার আর বসতে দেওয়া হবে না।