দুই মাস ধরে বিচারক নেই, থেমে আছে ৭৭ মামলার বিচার

দুই মাস ধরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারক নেই। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন বিচারপ্রার্থীরা। এই ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ৭৭টি চাঞ্চল্যকর মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আইন অনুযায়ী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো মামলা ১৩৫ কার্যদিবসের (মামলার ধার্য দিন) মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি না হলে মামলাটি আগের আদালতে ফেরত যাবে।
আদালত সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীকে সিলেটে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে বদলি করা হয়েছে। এ কারণে গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ট্রাইব্যুনাল বিচারকশূন্য রয়েছে। পুরো চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার জন্য এটিই একমাত্র দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।
বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে বিএনপির নেতা জামাল উদ্দিন চৌধুরী হত্যা মামলাসহ চাঞ্চল্যকর ৩০টি খুনের মামলা। এ ছাড়া নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর ও আনসারুল্লা বাংলা টিমের সদস্যদের বিরুদ্ধে ১৫টিসহ মোট ৭৭টি মামলা রয়েছে এই ট্রাইব্যুনালে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি আইয়ুব খান প্রথম আলোকে বলেন, বিচারক না থাকায় ভারপ্রাপ্ত বিচারকের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজের সম্মতি নিয়ে মামলাগুলোর তারিখ ফেলা হচ্ছে। জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার চাপ বেশি থাকায় বিচারকের পক্ষে বাস্তব কারণেই ট্রাইব্যুনালে এসে শুনানি করা সম্ভব হচ্ছে না। অবশ্য বিচারক না থাকা অবস্থায় মামলার তারিখ পড়লেও তা ১৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে গণনা করা হবে না। তিনি বলেন, নতুন বিচারক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। বিশেষ করে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য শিগগিরই বিচারক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মূল ফটকে পুলিশের তল্লাশিচৌকির সামনে বোমা হামলা চালান নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্যরা। ঘটনাস্থলে মারা যান পুলিশ কনস্টেবল রাজীব বড়ুয়া ও বিচারপ্রার্থী মো. শাহাবুদ্দীন। আহত হন পুলিশ কনস্টেবল আবু রায়হান, সামসুল কবির, রফিকুল ইসলাম, আবদুল মজিদসহ ১০ জন। এ ঘটনায় করা মামলাটি বিচারের জন্য ২০০৮ সালে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এসেছিল। তখন সাক্ষীরা হাজির না হওয়ায় ১৩৫ কার্যদিবসে মামলাটি নিষ্পত্তি করা যায়নি। পরে মামলাটি প্রথম অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফেরত যায়। গত বছরের শেষের দিকে মামলাটি আবার ট্রাইব্যুনালে আসে। ট্রাইব্যুনালে আসার পর এ পর্যন্ত মামলার ১২টি তারিখ পড়লেও একজন সাক্ষীকেও হাজির করা যায়নি। এর মধে৵ বিচারক না থাকা অবস্থায় আটটি তারিখ পড়েছে। তখন সাক্ষ্য দিতে এসে ফেরত যান সাক্ষী আবুল হোসেন, মো. এহসান ও মো. বাহাদুর।
এই মামলার সাক্ষী ও জঙ্গিদের বোমা হামলায় আহত পুলিশ কনস্টেবল রফিকুল ইসলাম বর্তমানে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের রেশন শাখায় কর্মরত। গত বৃহস্পতিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মাসখানেক আগে ভারত থেকে চিকিৎসা করে এসেছেন। মামলাটি যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সে জন্য ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ দিতে তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
পুলিশ নিহত হওয়ার এই মামলায় আসামি রয়েছেন জেএমবির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাবেক কমান্ডার জাবেদ ইকবাল ওরফে মোহাম্মদ ও বোমা তৈরির কারিগর জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজান। জাবেদ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে হাজিরা দেওয়ার জন্য ময়মনসিংহের আদালতে নেওয়ার পথে ত্রিশাল এলাকায় প্রিজন ভ্যানে গুলি ও বোমা ছুড়ে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ওই তিনজনের একজন বোমা মিজান। এ ঘটনায় জঙ্গিদের গুলি ও বোমাবর্ষণে এক পুলিশ সদস্য মারা যান।
২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরের টেরিবাজার এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে ২৮টি গ্রেনেডসহ মাসুম বিন আবদুল হাই নামের এক জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যা ব-৭। এ ঘটনায় নগরের কোতোয়ালি থানায় করা মামলাটি বিচারের জন্য গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসে। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মামলাটির চারটি তারিখ পড়েছে। কিন্তু বিচারক না থাকায় সাক্ষীরা এসে ফেরত যাচ্ছেন বলে জানান সরকারি কৌঁসুলি আইয়ুব খান।