আরও নয়টি লাশ উদ্ধার, নিখোঁজ এখনো ৯ জন

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার চরকিশোরগঞ্জে মেঘনা নদীতে ট্রলারডুবির ঘটনায় গতকাল শুক্রবার দুপুরে ট্রলারটির ভেতর থেকে আরও ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে গত দুই দিনে ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৭ জন।
এদিকে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পানগুছি নদীতে ট্রলারডুবির ঘটনার চতুর্থ দিন গতকাল সকালে আরও তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে নারী-শিশুসহ ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ২ জন।
রাজধানীর রামপুরা থেকে গত বৃহস্পতিবার ৯০ জন যাত্রী নিয়ে চাঁদপুরের মতলবের বেলতলী গ্রামের একটি মেলায় যাওয়ার পথে সোনারগাঁর চরকিশোরগঞ্জে প্রচণ্ড ঢেউয়ে মেঘনায় একটি লঞ্চ ডুবে যায়। এ ঘটনায় অনেক যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠলেও নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন নিখোঁজ হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিস ও বিআইডব্লিউটিএর ডুবুরি দল অভিযান চালিয়ে দুই নারী, এক শিশু ও এক পুরুষের লাশ উদ্ধার করে। নিখোঁজ ছিলেন ১৩ জন। গতকাল সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ও বিআইডব্লিউটিএর ডুবুরি দল তল্লাশি চালিয়ে দুপুরে ডুবে যাওয়া ট্রলারটির সন্ধান পায়। এরপর একে একে আরও ছয়টি লাশ ভেসে ওঠে।
গতকাল যাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয় তাঁরা হলেন ঢাকার রামপুরার বাসিন্দা সাফিয়া বেগম (৪৮), তাঁর মেয়ে রুবিনা বেগম (৩০), ঢাকার বসুন্ধরা নর্দ্দা এলাকার জয়বুন নেছা (৬৫), রানু আক্তার ও শান্তা আক্তার (২৮) এবং মানিকগঞ্জের ঘিওরের বানিয়াজুড়ি গ্রামের ভানু বেগম (৪৫)।
ট্রলারযাত্রী হালিম ভান্ডারি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও স্ত্রী, শাশুড়ি, শ্যালিকাসহ আমার পরিবারের পাঁচজন নিখোঁজ হয়। তাদের মধ্যে স্ত্রী রানুর লাশ গতকাল বিকেলে উদ্ধার হলেও অন্যরা এখনো নিখোঁজ।’
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনুর ইসলাম বলেন, অন্ধকার ঘনিয়ে আসায় সন্ধ্যা সাতটায় উদ্ধারকাজ গতকালের মতো শেষ করা হয়েছে। নিখোঁজ সাতজনকে উদ্ধারে আজ সকাল থেকে উদ্ধারকাজ শুরু করা হবে। তিনি আরও জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গতকাল চরকিশোরগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, মেঘনার পাড়ে বসে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা কান্নাকাটি করছেন। নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, দুদিন হয়ে গেল এখন পর্যন্ত লাশ উদ্ধার করতে পারছে না প্রশাসন। ধীরগতিতে চলছে উদ্ধার অভিযান।
বাগেরহাটে তিন নারীর লাশ উদ্ধার
মোরেলগঞ্জে পানগুছি নদীতে ট্রলারডুবির চতুর্থ দিনে গতকাল সকালে নদীর ফেরিঘাট, কাঁঠালতলা ও সোনাখালী এলাকা থেকে ভাসমান অবস্থায় আরও তিনটি মরদেহ উদ্ধার করে নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল।
সকালে যে তিন নারীর মরদেহ পাওয়া গেছে তাঁরা হলেন বাগেরহাটের শরণখোলার খেজুরবাড়িয়া গ্রামের নাছিমা বেগম (৩২), মোরেলগঞ্জের বারইখালী গ্রামের লাবণী বেগম (১৮) ও পিরোজপুরের ইন্দুরকানির পশ্চিম বালিপাড়া গ্রামের মোসাম্মৎ নাসরিন (২৮)।
নিখোঁজ দুই শিশু হলো শরণখোলার পল্লিমঙ্গল এলাকার মো. বাচ্চু বাদশার ছেলে রাহাত বাদশা (১০ মাস) ও রায়েন্দা এলাকার মো. মহসীনের ছেলে মো. হাসিব (৬)।
গত মঙ্গলবার সকালে মোরেলগঞ্জের ছোলমবাড়িয়া খেয়াঘাট থেকে মোরেলগঞ্জ পুরাতন থানা ঘাটে যাওয়ার পথে প্রায় ৮০ জন যাত্রী নিয়ে এই ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে।
বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মাসুদুর রহমান জানান, সকালে উদ্ধার করা মরদেহ তিনটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া নিখোঁজের তালিকায় থাকা দুজনকে খুলনার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাওয়া গেছে। এখনো নিখোঁজ দুটি শিশুর উদ্ধারে অভিযান চলছে।