ইটভাটা নিয়ে অভিযোগ দিতে গিয়ে মাথা ফাটল পাঁচ কৃষকের

যশোরের কেশবপুরে অনুমোদনহীন একটি ইটভাটার লোকজন গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় পাঁচ কৃষককে পিটিয়ে আহত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই কৃষকেরা ইটভাটার বিষয়ে সরেজমিনে তদন্তে আসা একজন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিতে গিয়েছিলেন। সংঘর্ষে ভাটার মালিকপক্ষের তিনজনও আহত হন।
আহত কৃষকেরা হলেন বারুইহাটি গ্রামের মুজিবর সানা (৩৫), মশিয়ার রহমান (৪০), আবদুস সাত্তার (৪০), নুর আলী (৫০) ও নজরুল ইসলাম (৩১)। তাঁদের মাথা ফেটে গেছে।
আহত কৃষকদের কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তাঁদের মধ্যে মশিয়ার রহমানের অবস্থা গুরুতর। ঘন ঘন বমি হওয়ায় এবং কানে অসুবিধা হওয়ায় তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবদুস সাত্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সরেজমিনে তদন্তে গেলে আমরা সেখানে জড়ো হয়ে ইটভাটার বিরুদ্ধে যুক্তি তুলে ধরছিলাম। এ সময় ভাটার মালিকপক্ষের কয়েকজন চাপাতি ও বাঁশের লাঠি নিয়ে হামলা চালান।’ তিনি বলেন, লাঠির আঘাতে কৃষকদের মধ্যে অনেকের মাথা ফেটে যায়। তাঁদের হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স এলেও তাতে বাধা দেওয়া হয়। পরে আহত কৃষকদের ভ্যানে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালেও ভাটার মালিকের লোকজন তাঁদের মারধর করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেশবপুরের বারুইহাটি গ্রামে পাকা রাস্তার পাশে ২২ বিঘা জমিতে গড়ে উঠেছে রোমান ব্রিকস। এর পাশেই রয়েছে ফসলি জমি। এসব জমির মালিকদের আশঙ্কা, ইটভাটার কারণে তাঁদের ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাবে। এ বিষয়ে এলাকার ৭৫ জন গত ফেব্রুয়ারিতে যশোর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। পরে গত ৭ মার্চ কেশবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কবীর হোসেন ‘রোমান ব্রিকস’ বন্ধের নির্দেশ দেন।
একই সঙ্গে উপজেলার আরও তিনটি ইটভাটা বন্ধ করে দেয় উপজেলা প্রশাসন। ভাটাগুলো আইন লঙ্ঘন করে গড়ে ওঠে। এ চারটি ভাটা নিয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় ‘কৃষিজমি ও পৌর এলাকায় তৈরি হচ্ছে ইটভাটা’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়।
রোমান ব্রিকসের মালিক আবু বক্কর সিদ্দিকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেশবপুরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করতে যান। বৃহস্পতিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাটার মালিক আবু বক্কর সিদ্দিকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বারুইহাটি গ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানে কৃষকের অভিযোগ শুনতে চাইলে উত্তেজনা দেখা দেয়। তখন আমি ঘটনাস্থল ত্যাগ করি।’
তবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র ঘটনাস্থলে থাকা অবস্থাতেই ভাটার মালিকের লোকজন কৃষকদের ওপর হামলা করেন। হামলাকারীর সংখ্যা ছিল ২০-২৫। অন্যদিকে কৃষকেরা ছিলেন সংখ্যায় ৬০-৭০। তাঁরা একজোট হয়ে হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে ভাটার মালিকপক্ষের তিনজন আহত হন। তাঁরা হলেন সাজ্জাত আলী সরদার (৪০), বিল্লাল হোসেন (২৬) ও রজব আলী (৬০)।
ইটভাটার মালিক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। তাই কী ঘটেছে তা বলতে পারব না।’ হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের ওপর পুনরায় হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এমন কোনো বিষয় আমার জানা নেই।’
এদিকে হামলার ঘটনায় কৃষকেরা কেশবপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করতে থানার একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছি। প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’