নেপাল-ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বাধার মুখে

দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে নেপাল কিংবা ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি অথবা সেখানে যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আনতে বাংলাদেশের সামনে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের প্রণীত ‘গাইডলাইনস অন ক্রসবর্ডার ট্রেড অব ইলেকট্রিসিটি’ (আন্তসীমান্ত বিদ্যুৎ কেনাবেচা-সংক্রান্ত নীতিমালা) এই বাধার সৃষ্টি করেছে।
গত বছরের শেষ দিকে ভারতের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় এই নীতিমালা প্রণয়নের পর ৫ ডিসেম্বর এ-সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করে। ওই নীতিমালায় ‘এগ্রিমেন্টস ফর ট্রেড’ শিরোনামের তিন ধারায় বলা হয়েছে, ভারতের বিদ্যুৎ খাতের যেকোনো সংস্থা প্রতিবেশী কোনো দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কেবল দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ আমদানি-রপ্তানি করতে পারবে।
কিন্তু নেপাল কিংবা ভুটান থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আনতে হলে ভারতের ভূমি ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া ভুটান আগে থেকেই ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎ রপ্তানিতে চুক্তিবদ্ধ। তাই ত্রিপক্ষীয় কোনো চুক্তি (বাংলাদেশ-নেপাল-ভারত কিংবা বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত) ছাড়া নেপাল-ভুটান থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আনা সম্ভব হবে না। অথচ ভারত সরকারের নীতিমালায় শুধু দ্বিপক্ষীয় চুক্তিকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ ওই দেশ দুটির সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে। দুই দেশই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি ও যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সম্মতি দিয়েছে। বাংলাদেশ তার ভিত্তিতে ভুটানে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিনিয়োগেরও পরিকল্পনা করেছে।
অন্যদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন সে দেশের সরকারের প্রণীত নীতিমালা চূড়ান্ত করে তাদের বিধিবিধানে যুক্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করে এনেছে। ভারতে বিদ্যুৎ খাতে নতুন কোনো নিয়মকানুন প্রবর্তন করতে হলে রেগুলেটরি কমিশনের সম্মতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। কমিশন তাদের জন্য প্রণীত আইন অনুযায়ী এ ধরনের বিষয়ে সম্মতি দেওয়ার প্রক্রিয়া চালায়।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, নেপাল-ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সব সময় ত্রিপক্ষীয় চুক্তির কথাই বলে এসেছে। নেপাল-ভুটানও ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ-বাণিজ্যে আগ্রহী। ভারতের সঙ্গেও এ বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশের আলোচনা হয়েছে। তারাও এ ব্যাপারে অসম্মতি প্রকাশ করেনি। বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই বিবেচনা করার কথা বলেছে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতার একাধিক চুক্তি সই হবে। সেখানে নেপাল ও ভুটান থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আনার বিষয়েও আলোচনা ও সমঝোতা হতে পারে। বাংলাদেশ সব সময় এই সমঝোতা চায়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন মেয়াদের সরকার ও রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির কথা বক্তৃতায় বলে এসেছে। কিন্তু ২০০৯ সালের আগে কোনো সরকার এ বিষয়ে নেপাল, ভুটান কিংবা ভারতের সঙ্গে আলোচনাই করেনি। শেষ পর্যন্ত ওই তিনটি দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ যখন একটি সমঝোতায় উপনীত হয়েছে, তখনই ভারতের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বিধান রেখে নতুন একটি নীতিমালা তৈরি করল।
অবশ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে বলেছেন, নেপাল-ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে সৃষ্ট বাধা ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অপসারণ করা সম্ভব হবে।