গড়াই থেকে অবৈধভাবে তোলা বালু যাচ্ছে সরকারি প্রকল্পে

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লাহিনীপাড়ায় গড়াই নদে অবৈধভাবে পাইপ বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। সেই বালু কয়েক কিলোমিটার দূরে সরকারি একটি গৃহায়ণ প্রকল্পের জায়গা ভরাটে ব্যবহার করছেন ঠিকাদার। জেলা প্রশাসন বলছে, অবৈধ এ বালু উত্তোলনে ‘রাঘববোয়ালরা’ জড়িত। এ জন্য তারাও অসহায়।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগের স্থানীয় হাউজিং এস্টেট কার্যালয় সূত্র জানায়, কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে লাহিনীপাড়া এলাকায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের নবনির্মিত ভবনের পাশেই জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগের প্রায় ২২ একর জমি আছে। গত বছর এ জায়গায় ২০০টির বেশি প্লট করে লটারির মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু জায়গাটি মহাসড়ক থেকে নিচু হওয়ায় বালু ফেলে ভরাটের সিদ্ধান্ত হয়। দরপত্রের মাধ্যমে বালু ভরাটের কাজ পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খোকন ট্রেডিং এজেন্সি।

কুষ্টিয়া হাউজিং এস্টেট কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী শফিউল আলম বলেন, বালু ভরাট, রাস্তা ও নালা নির্মাণের জন্য সাড়ে সাত কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বড় অংশই ব্যয় হবে বালু ভরাটে। ইতিমধ্যে বালু ভরাটের কাজ শেষ পর্যায়ে। পাইপ বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারকে কাজ দিয়েছি। তিনি বালু চুরি করে আনবেন, নাকি উড়োজাহাজ বা হেলিকপ্টারে করে আনবেন, সেটা তাঁর বিষয়। আমরা বালু ভরাটের কাজ বুঝে নিতে চাই।’

গত ৩০ মার্চ সরেজমিনে দেখা যায়, লাহিনীপাড়ায় মাসউদ রুমী সেতু-সংলগ্ন গড়াই নদে বড় খননযন্ত্র বসানো হয়েছে। সেখান থেকে পাইপ দিয়ে কয়েক কিলোমিটার দূরের ওই গৃহায়ণ প্রকল্পে বালু নেওয়া হচ্ছে। সেতু থেকে শুরু করে প্রকল্প পর্যন্ত মহাসড়কের পাশে পাইপের সঙ্গে বসানো হয়েছে বড় ইঞ্জিন। রাত-দিন বালু উত্তোলন চলছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের বেশির ভাগ জায়গায় বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খোকন ট্রেডিং এজেন্সির প্রকল্পব্যবস্থাপক সোহাগ হোসেন গত বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন বালু তোলা বন্ধ রয়েছে। আমি এ বিষয়ে এর বেশি কিছু জানি না। আপনি ঢাকায় এজেন্সির বড় কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’

জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগ বলছে, নদ-নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন হয়। আর পাইপ বসিয়ে বালু তোলার কোনো সুযোগই নেই। ফলে এটা পুরোপুরি অবৈধ।

বালু তোলার বিষয়ে জানতে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান এ প্রতিবেদক। এ সময় সেখানে বসে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু হেনা মোস্তফা কামাল। বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসকের সামনেই তিনি বললেন, ‘ভাই রাঘববোয়ালরা এ প্রকল্পের পেছনে আছে। আপনারা সবই জানেন, আমাদের কিছু করার নেই।’