একটি নির্দিষ্ট বন্ধুরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকলে চলবে না

৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যাচ্ছেন। এই সফরকালে তিস্তা চুক্তি না প্রতিরক্ষা চুক্তি—নাকি দুটিই সই হবে; নাকি হবে না, তা নিয়ে দুই দেশের মিডিয়ায় আলোড়ন বইছে। 

ভারত ও চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ফারুক সোবহান প্রথম আলোকে দেওয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের নানা দিক তুলে ধরেছেন। তাঁর বিশ্লেষণে এটা পরিষ্কার যে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব’সহ অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক বিবেচনায় নিয়েই ভারত এখন ‘বেইজিংয়ের সঙ্গে যা থাকবে, সেটা দিল্লির সঙ্গে নয় কেন’—এ রকম একটি মনোভঙ্গি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তিনি অবশ্য তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন না হওয়ার পটভূমিতে এ রকম একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করতে গিয়ে বাংলাদেশের জনগণের স্পর্শকাতরতা বিবেচনায় নেওয়ার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। তিনি যদিও জানেন না যে প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারকে কী আছে, কিন্তু তিনি একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর নীতিগতভাবে বিরোধী নন।
তিনি সতর্ক করেছেন যে বাংলাদেশকে কোনোভাবেই কোনো একটি নির্দিষ্ট বন্ধুরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকে পড়লে চলবে না। তিনি প্রশিক্ষণ ও যৌথ মহড়ার মতো চলমান সামরিক সহযোগিতাকে একটি সমঝোতা স্মারকে লিখে নেওয়ার মতো বিষয়কে নীতিগতভাবে সমর্থন করেন। অবশ্য বাংলাদেশে যাঁরা ভাবছেন যে এ রকম একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের আদৌ কোনো দরকার নেই, তেমন ভিন্নমতের প্রতিও তিনি শ্রদ্ধাশীল।
তাঁকে যখন প্রশ্ন করা হয়, প্রয়োজনীয়তা থাকলেও আগামী সপ্তাহেই তা সই করাটা জরুরি কি না, তখন তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। বলেছেন, এটা একান্তভাবেই প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞার বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরকালে তিস্তা চুক্তি সই হবে কি না, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।
পেশাদার কূটনীতিবিদ ফারুক সোবহান বেশ অবাক হয়েছেন। কারণ, সম্প্রতি দিল্লিতে গিয়ে সবার সঙ্গে আলাপ করে তাঁর মনে হয়েছে, অল্প কিছু লোক বাদে আজকের বাংলাদেশকে তাঁরা চেনেনই না। বাংলাদেশ থেকে বছরে ২২ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার ভারতে যাচ্ছে, এ তথ্যও তাঁরা জানেন না। তাঁরা ভাবেন, ২০১৭ সালেও বাংলাদেশ সেই ১৯৭২-৭৩ সালেই পড়ে আছে।
তিস্তা চুক্তি সই না হওয়াসহ অন্যবিধ কারণে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যে সংবেদনশীলতা তৈরি হয়েছে, সে বিষয়েও ওই ভারতীয়দের ভাবলেশহীন মনে হয়েছে তাঁর।
ইংরেজিতে নেওয়া এই বিশেষ সাক্ষাৎকারের পূর্ণ ভাষ্য দেখুন প্রথম আলো ইংরেজি অনলাইনে। এর সংক্ষেপিত বাংলা তরজমা দেখুন আগামীকাল প্রথম আলোর মুদ্রণ সংস্করণে।