কৃমিনাশক ওষুধ খেয়ে আরও শতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় কৃমিনাশক ওষুধ খেয়ে গতকাল সোমবার শতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে দুই-তিনজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে একটি বিদ্যালয়ের কয়েকটি দরজা-জানালা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় ৩৬ জন, জামালপুরের মাদারগঞ্জে ১০ জন, রাজবাড়ী জেলায় ১২ জন এবং ঢাকার আশুলিয়ায় ৫ জন শিক্ষার্থী কৃমিনাশক বড়ি খেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এই নিয়ে কৃমিনাশক সেবন সপ্তাহের প্রথম তিন দিনে বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৯০০ শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি হয়। রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্যমতে, অধিকাংশ শিশু এক-দুই ঘণ্টা হাসপাতালে থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে গেছে। তিন-চারটি শিশু কেবল রাতে হাসপাতালে ছিল। কোনো শিশুকেই চিকিৎসার জন্য ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে রাখার দরকার হয়নি।
যোগাযোগ করা হলে সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক সানিয়া তহমিনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৃমিনাশক বড়ি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বড়ি সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিছু জায়গায় শিশুদের সাময়িকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর আমরা পাচ্ছি। সারা দেশের সিভিল সার্জনদের সতর্ক করেছি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা ‘কৃমিনাশক সেবন সপ্তাহ’ পালন করছে। ১ থেকে ৬ এপ্রিল ৫-১৫ বছর বয়সী দেশের প্রায় ৪ কোটি শিশুকে এই বড়ি খাওয়ানোর কথা। প্রথম দুই দিনে ৭০০-এর বেশি শিশু অসুস্থ হওয়ার পর রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছিল, শিশুদের অসুস্থ হওয়ার কারণ গণমনস্তাত্ত্বিক রোগ। কৃমিনাশক ভরা পেটে খেতে হবে। শারীরিক পরিশ্রমের পর বড়ি খাওয়া যাবে না।
গতকাল কৃমিনাশক বড়ি খেয়ে অসুস্থতার খবরে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে হাজীগঞ্জ উপজেলার সুহিলপুর উচ্চবিদ্যালয়ে। এলাকায় দুই-তিনজন ছাত্রীর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা বিদ্যালয়ের কয়েকটি কক্ষের দরজা-জানালা ভাঙচুর করে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমি অসুস্থ শিক্ষার্থীদের নিয়ে হাসপাতালে চলে এসেছি। ভাঙচুরের খবর লোক মারফত জেনেছি।’
বিদ্যালয়ের সভাপতি আহসান হাবিব জানান, একাধিক ছাত্রী অসুস্থ হওয়ার পর দুই-তিনজন ছাত্রীর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে বিদ্যালয়ে হামলা চালান। তবে এলাকার মানুষ এগিয়ে আসায় তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, তিনটি বিদ্যালয়ের ১১০ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ছাত্রী। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে খাওয়ার স্যালাইন ও অক্সিজেন দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আলী নুর মোহাম্মদ বশির আহমেদ বলেন, শিশুরা সবাই গণমনস্তাত্ত্বিক রোগে আক্রান্ত। একজনের দেখাদেখি অন্যরাও অসুস্থ হয়ে পড়ে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন জেলায় শিশুদের অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করার জন্য তাঁরা গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
{প্রতিবেদন তৈরি করতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার এবং রাজবাড়ী, জামালপুর, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) ও লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি}