স্নানোৎসবে ব্রহ্মপুত্র তীরে মানুষের ঢল

উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার জামালপুর, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের মহা অষ্টমী স্নানোৎসব হয়েছে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বয়সের মানুষ মন্ত্র উচ্চারণ করে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করেন। জগতের যাবতীয় সংকীর্ণতা ও পাপমোচনের জন্য প্রার্থনা করেন তাঁরা।

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে ভোর থেকে হাজারো পুণ্যার্থীর ঢল নামে। উপজেলা সদর স্নানঘাট থেকে দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করেন তাঁরা। পরে শ্রীশ্রী কুলেশ্বরী দেবালয় মন্দিরে পূজা ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়। হোসেনপুর উপজেলা পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, জেলার ১৩টি উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহের গফরগাঁও, নান্দাইল, ঈশ্বরগঞ্জ থেকেও পুণ্যার্থীরা অংশ নেন এ উৎসবে। এ উপলক্ষে ব্রহ্মপুত্রের তীর, ঐতিহ্যবাহী কুলেশ্বরী বাড়ি ও উপজেলা পরিষদ মাঠে দিনব্যাপী বসে গ্রামীণ মেলা। স্নান এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জামাল উদ্দিন, হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নান্নু মোল্লা, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জহিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মাহবুবুল হক প্রমুখ।

সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শেরপুর সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদে বিপুলসংখ্যক হিন্দু নারী-পুরুষ ও শিশু মন্ত্র উচ্চারণ করে স্নান করেন। ব্রহ্মপুত্র নদের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা পুণ্যার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। পরে ব্রহ্মপুত্র নদসংলগ্ন জামালপুরের দয়াময়ী কালীমাতার মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নেন তাঁরা। এ উপলক্ষে মন্দির প্রাঙ্গণে তিন দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

জামালপুর-শেরপুর ব্রহ্মপুত্র সেতু এলাকায় ভোর থেকেই পুণ্যার্থীরা পাপমোচনের আশায় স্নানের জন্য ভিড় করেন। পরে তাঁরা জামালপুর শহরের দয়াময়ী মন্দিরে মানত ও রাধামোহন জিউ মন্দিরে বাসন্তী পূজা করেন। শহরের পালপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুশান্ত পাল বলেন, ‘অষ্টমী স্নান উপলক্ষে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে আলাদা আলাদা কোনো স্নানঘাট নির্মাণ করা হয়নি। ফলে পুণ্যার্থীদের নদে নেমে স্নান করতে এবং পূজা-অর্চনা করতে দুর্ভোগে পড়তে হয়। নারী পুণ্যার্থীদের কাপড় বদলানোর জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে মাত্র ছয়টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তাঁদের বিড়ম্বনায় ও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে।

স্নানোৎসব উপলক্ষে শহরের বৈশাখী মেলার মাঠে মেলার আয়োজন করা হয়।

(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ, জামালপুরশেরপুর প্রতিনিধি)