জেলেরা ধাওয়া করলেন মৎস্য কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের

বরগুনার পাথরঘাটায় মৎস্য কর্মকর্তা ও নৌ পুলিশ সদস্যদের ধাওয়া করেছেন বিক্ষুব্ধ জেলেরা। গতকাল শুক্রবার ভোরে স্থানীয় বলেশ্বর নদের তীরের রূহিতা এলাকায় জাটকা ধরা বন্ধের অভিযানে গেলে ক্ষুব্ধ জেলে পরিবারের সদস্যরা তাঁদের ধাওয়া করেন। এ সময় তাঁদের ব্যবহৃত পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জিয়াউল হক গতকাল শনিবার দুপুরে বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত রূহিতা এলাকায় গিয়ে মৎস্য কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বিক্ষুব্ধ জেলেরা বলেন, সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয় দেখিয়ে অন্তত ২০টি বেহুন্দি জালসহ প্রায় ৭৫ জন মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেকে আটক করা হয়। আটক লোকজনের মধ্যে ২৭ থেকে ৩০ জনকে জনপ্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর ২০টি বেহুন্দি জালের মধ্যে ১৫টি জাল ৭ থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ফেরত দেওয়া হয়। অপর ৪৮ জন জেলেকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এতে তাঁদের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই জেলে পরিবারের সদস্যরা ক্ষুব্ধ। এ ঘটনার পর আবারও গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে চরদুয়ানী নৌ পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে জাটকা অভিযানে যায় পাথরঘাটা মৎস্য দপ্তর। এতে বিক্ষুব্ধ জেলে পরিবারের সদস্যরা প্রতিরোধ করে তাঁদের ধাওয়া দেন।
জানতে চাইলে পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান গতকাল দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি বেশ কিছু জেলেকে আটক করে চাঁদাবাজি করা হয়। ওই জেলেরা ধারণা করছিলেন, এবারও হয়তো এ ধরনের কিছু করা হচ্ছে। ওই ঘটনায় জেলেরা ক্ষুব্ধ। তবে তাঁদের কেউ মারধর করেননি।
চরদুয়ানী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপপরিদর্শক (এসআই) রমজান মিয়া বলেন, ‘আমাদের ধাওয়া দেওয়ায় ফাঁড়ির এসআই মেহেদী জামান ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুরাদ হোসেন প্রামাণিক সামান্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’ তবে ঘুষ নিয়ে জাল ও জেলেদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।
বরগুনা-২ আসনের (পাথরঘাটা, বামনা ও বেতাগী) সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বলেশ্বর নদের তীরের ওই এলাকায় সম্প্রতি এক জনসভায় গিয়ে জেলেদের ক্ষুব্ধ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারি। ওই এলাকার মানুষ মূলত উন্নয়নও চায় না, তারা চায় অবাধে মাছ শিকার করতে। নদী ও সাগরে মাছ শিকারই তাদের আয় রোজগারের একমাত্র পথ। তবে সম্প্রতি ৪৮ জন জেলেকে আটক করে জেলহাজত দেওয়ায় তাদের মাঝে ভয় ও আতঙ্ক কাজ করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমিও উদ্বিগ্ন।’
এ ব্যাপারে বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ায় একটি মামলা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তবে ক্ষুব্ধ হওয়ার ঘটনাটি বা তাদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সে ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এ ঘটনায় পুলিশ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।