দুটি গাড়িসহ ছয় গুণ সম্পদ বেড়েছে ধীরেন্দ্র দেবনাথের

২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে বরগুনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও ‘ব্যবসায়ী’ স্ত্রী মাধবী দেবনাথের নামে কোনো গাড়ি ছিল না। গত পাঁচ বছরে তিনি কোটি টাকা দামের ল্যান্ডক্রুজার ও টয়োটা ব্র্যান্ডের দুটি বিলাসবহুল গাড়ির মালিক হয়েছেন। আর স্ত্রী নোয়া ব্র্যান্ডের মাইক্রোবাসের মালিক হয়েছেন।
পাঁচ বছরে ধীরেন্দ্র দেবনাথের আয় বেড়েছে প্রায় ১২ গুণ, সম্পদ বেড়েছে ছয় গুণের বেশি। অন্যদিকে স্ত্রীর আয় গোপন করলেও সম্পদ বেড়েছে ঠিকই। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বরগুনা জেলা কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে সাংসদ নির্বাচিত হন।
যেভাবে আয় বাড়ল: ধীরেন্দ্র তাঁর পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও বরগুনা জজ কোর্টের আইনজীবী। বার্ষিক আয় ২৪ লাখ ৮১ হাজার ৮৩৬ টাকা। এর মধ্যে আইন ও পরামর্শক পেশা থেকে ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা, সাংসদ হিসেবে সম্মানী ভাতা তিন লাখ ৩০ হাজার ও ব্যাংকের সুদ বাবদ ৯১ হাজার ৮৩৬ টাকা আয় করেছেন। ২০০৮ সালে আইন পেশা থেকে তিনি মাত্র দুই লাখ ১০ হাজার টাকা আয় করেছিলেন। অন্য কোনো আয়ও ছিল না।
২০০৮ সালের আগে ধীরেন্দ্র দেবনাথকে ওকালতি করতে দেখা গেলেও সাংসদ হওয়ার পর তা দেখা যায়নি। এবারের হলফনামায় আইন পেশা থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয়ের কথা উল্লেখ করলেও তিনি তাঁর আইনি প্রতিষ্ঠানের নাম ও কোনো বিবরণ দেননি।
সম্পদ বেড়েছে ছয় গুণ: গতবার ধীরেন্দ্রর সম্পদের আর্থিক মূল্য ছিল ২১ লাখ ১১ হাজার টাকা। এবার তা ছয় গুণের বেশি বেড়ে এক কোটি ৩২ লাখ টাকা হয়েছে। এবার নগদ টাকা আছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা, ব্যাংকে আছে ২০ লাখ ৯৫ হাজার ৪৭৩ টাকা। ২০০৮ সালে নগদ ছিল ছয় লাখ ৯৪ হাজার ৬০ টাকা, ব্যাংকে ছিল তিন লাখ টাকা। তখন তাঁর নামে ব্যাংকে কোনো সঞ্চয়পত্র ছিল না। এবার ছয় লাখ টাকার স্থায়ী আমানত দেখিয়েছেন। গতবার কোনো যানবাহনও ছিল না। এবার কয়েক কোটি টাকা দামের ল্যান্ডক্রুজারের দাম মাত্র ৬৫ লাখ ২৭ হাজার ৮৬৭ টাকা ও টয়োটা ভক্সি প্রাইভেট কারের দাম দেখিয়েছেন ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। গতবার ২০ হাজার টাকার আসবাব ছিল। এবার তা বেড়ে দুই লাখ টাকা হয়েছে।
গতবার ধীরেন্দ্র দেবনাথের মাত্র দশমিক ২ একর কৃষিজমি ছিল। অকৃষিজমি ছিল না। এবার কৃষিজমি ১৫ গুণ বেড়ে তিন একর হয়েছে। অকৃষিজমি হয়েছে ২৩ দশমিক ২ শতক। কৃষিজমির দাম উল্লেখ করেননি। অকৃষিজমির দাম বাজারদরের চেয়ে অনেক কম, মাত্র দুই লাখ টাকা উল্লেখ করেছেন।
বরগুনা শহরের হাইস্কুল সড়কে একতলা ভবন (দেড় লাখ টাকা), দুটি টিনের ঘর ও শহরের সদর রোডে ব্যক্তিগত ‘ল’ চেম্বার ২০০৮ সাল থেকেই রয়েছে। এবার শহরের পশ্চিম বরগুনায় ২১ শতক জমির (মায়ের কাছ থেকে পাওয়া) ওপর একটি আধা পাকা বাড়ি করেছেন। দাম উল্লেখ করেছেন ছয় লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
স্ত্রীও ধনী হয়েছেন: ধীরেন্দ্র তাঁর স্ত্রী মাধবীকে ব্যবসায়ী উল্লেখ করলেও তাঁর আয়ের বিবরণ দেননি। মাধবীর কাছে গতবার নগদ টাকা না থাকলেও এবার দুই লাখ ১১ হাজার ৩৬৮ টাকা আছে। এবার মাধবীর নামে একটি মাইক্রোবাস (নোয়া ব্র্যান্ডের) হয়েছে। দাম ১৬ লাখ টাকা। মাধবীর নামে আগে থেকেই ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট ও ১২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আছে। ফ্ল্যাটের মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ২৯ লাখ ৪৫ হাজার ১২৪ টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুই হাজার ৪০০ বর্গফুট আয়তনের ওই ফ্ল্যাটটি ঢাকার গুলশানের ২ নম্বর সেকশনে ১২৭ নম্বর রোডে অবস্থিত। বর্তমানে ওই এলাকায় প্রতি বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটের দাম ১০ হাজার থেকে ২১ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা দাম ধরলেও ফ্ল্যাটটির দাম দাঁড়ায় দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা।
যোগাযোগ করা হলে সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, ‘গুলশানের বাড়িটি অনেক পুরোনো। ১৫ বছর আগের কেনা।’
আইন পেশা থেকে ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হলফনামার তথ্য যাঁরা সরবরাহ করেছেন, তাঁদের কাছ থেকে জেনে নিন।’ এর বেশি কিছু বলেননি তিনি।