গোড়া থেকে বালু তুলে দেওয়া হচ্ছে বাঁধে

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চড় খড়িবাড়ি গ্রামে তিস্তা নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্মাণাধীন বাঁধের কাছেই বোমা মেশিন বসিয়ে গভীর গর্ত খনন করে বালু তুলে ওই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে নির্মাণ সম্পন্ন না হতেই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে বাঁধটি।

এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সূত্রে জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে তিস্তা নদীর ভারতীয় সীমান্ত বরাবর ৪ কোটি ৩১ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৬০ মিটার দীর্ঘ ওই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। আরাধনা এন্টারপ্রাইজ নামের রংপুরের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই নির্মাণকাজ করছে।

সরেজমিনে দেখাযায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন বাঁধের ২০ মিটারের কম দূরত্বে ভারী বোমা মেশিন বসিয়ে গভীর গর্ত করে বালু তুলছে। ওই বালুই ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁধটির নির্মাণকাজে। অথচ নিয়মানুযায়ী নির্মাণাধীন বাঁধের ৫০ মিটারের মধ্যে বালু বা মাটি তোলা অবৈধ বলে জানান পাউবোর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, খুব কাছেই খাল খনন করে সরাসরি পাইপের মাধ্যমে বাঁধটি নির্মাণ করা হচ্ছে। আসন্ন বর্ষায় ওই খালে ধস নেমে বাঁধটি বিধ্বস্ত হতে পারে। তাঁরা আরও জানান, রংপুরের ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া কাজটি করছেন ডিমলা উপজেলা শহরের স্থানীয় ঠিকাদার আশরাফুল ইসলাম। তিনি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী এর প্রতিবাদও করতে সাহস পাচ্ছেন না।

এ বিষয়ে কথা বললে বালু উত্তোলনকাজে নিয়োজিত বোমা মেশিনের মালিক মোতালেব হোসেন, দুলাল হোসেন ও মোকাদ্দেস হোসেন বলেন, তাঁরা এখানে আটটি মেশিন দিয়ে বালু তুলে সরাসরি পাইপের মাধ্যমে বাঁধে দিচ্ছেন। প্রতি হাজার ঘনফুট বালু এক হাজার টাকা হিসেবে সরবরাহ দিচ্ছেন। মাসখানেক সময় ধরে কাজ চলছে। কত বালু উঠেছে তা এখনো হিসাব হয়নি। তাঁরা বলেন, ঠিকাদারের নির্দেশে তাঁরা এ কাজ করছেন।

এ বিষয়ে ওই কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা পাউবোর ডালিয়া ডিভিশনের শাখা কর্মকর্তা (এসও) আবদুল মোন্নাফ হাওলাদার বলেন, ৪ কোটি ৩১ হাজার টাকায় ৩৬০ মিটার ওই বাঁধটির নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ হয় রংপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরাধনা এন্টারপ্রাইজ। কাজটি করছেন ডিমলার ঠিকাদার আশরাফুল ইসলাম। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা খুবই খারাপ। তাই বেশি দূর থেকে বালু সংগ্রহ করতে পারছেন না ঠিকাদার। তাঁরা সেখানে যে খাল খনন করছেন সেটি আবার নদীর বালু দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হবে বলে দাবি করেন তিনি। বাঁধটি বিধ্বস্ত হওয়ার তেমন কোনো আশঙ্কা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় ঠিকাদার আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কাজটি আরাধনা এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় করছি। সেখানে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না।’