কমিটি ছাড়াই চলছে ছাত্রলীগের দুই উপজেলার কার্যক্রম

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি নেই প্রায় সাত মাস। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই এক যুগ ধরে চলছিল এই দুটি উপজেলা কমিটি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে কোনো আহ্বায়ক কমিটি না করে ওই কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়। উপজেলা দুটিতে সংগঠনটি হয়ে পড়ে অভিভাবকহীন। এতে স্থানীয় পর্যায়ে ছাত্রলীগের স্বাভাবিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে সর্বশেষ রানীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। তখন রানীশংকৈল উপজেলা ছাত্রলীগে খাইরুল ইসলাম সভাপতি ও মোস্তাফিজুর রহমান সাধারণ সম্পাদক এবং হরিপুরে মজিবর রহমান সভাপতি ও আলিম আল রাজিব চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আলিম আল রাজিব সম্মেলনের কয়েক মাস পরেই সহসাধারণ সম্পাদক পল্টু রায়কে দায়িত্ব দিয়ে একটি চাকরিতে যোগ দিয়ে এলাকা ছাড়েন। এরপর দীর্ঘ ১২ বছর খাইরুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, মজিবর রহমান ও পল্টু রায় ওই দুই উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেন।

জেলা ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় এবং সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কর্মতৎপরতা কমে যাওয়ায় ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলা ছাত্রলীগ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার পারভেজ স্বাক্ষরিত এক নির্দেশে এই কমিটিগুলো বিলুপ্ত করা হয়। নতুন নেতৃত্বের জন্য ওই মাসের ২১ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত, ছাত্রত্বের প্রমাণপত্রসহ জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর বা উপদপ্তর সম্পাদকের কাছে আবেদনপত্র জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু কমিটি বিলুপ্ত করার পর ওই সময় সংগঠন পরিচালনায় কোনো আহ্বায়ক কমিটিও গঠন না করায় নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে উপজেলা ছাত্রলীগ। পরে অবশ্য পীরগঞ্জ ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু বিলুপ্ত ঘোষণার পর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও রানীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি আজও গঠন করা সম্ভব হয়নি।

বিলুপ্ত হওয়া রানীশংকৈল উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খাইরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের না জানিয়ে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। অথচ সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে একটি আহ্বায়ক কমিটি করা যেত। সেটিও করা হয়নি।’ রানীশংকৈল পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি তামিম হোসেন বলেন, ‘রানীশংকৈল উপজেলা ছাত্রলীগ কবে নতুন নেতৃত্ব পাবে আমারা বুঝে উঠতে পারছি না। এখন পৌর কমিটি দিয়েই উপজেলা ছাত্রলীগের কার্যক্রম চলছে। এখানে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অবস্থা শক্তিশালী। তবুও সংগঠন পরিচালনায় নেতৃত্বের বিকল্প নেই।’

রানীশংকৈল পৌর ছাত্রলীগের সহসভাপতি তারেক আজিজ বলেন, ‘রানীশংকৈল ছাত্রলীগ জেলার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছাত্রসংগঠন। এখানে কমিটি না থাকলেও বড়ভাইদের (সাবেক ছাত্রলীগ নেতা) পরামর্শে ছাত্রলীগের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।’

জেলা ছাত্রলীগের সদস্য ও হরিপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ইউসুফ আলী বলেন, ‘হরিপুরে দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের কমিটি নেই। এখানে ছাত্রলীগ যেভাবে চলছে, তাকে চলা বলে না।’

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুব হোসেন বলেন, স্থানীয় রাজনৈতিক-সংকটে রানীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন আটকে রয়েছে। তবে নতুন কমিটি গঠনের কাজ অনেকটাই গুছিয়ে আনা। শিগগিরই নতুন নেতৃত্বের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।