স্বতন্ত্র প্রার্থীর কার্যালয় ভাঙচুর, মারধর

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নান্না মিয়ার তিনটি নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর ও সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. আলাউদ্দিন বাহাদুরের কর্মীদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগ করেছেন নান্না মিয়া।

এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার বৈঠাকাটা বাজারে নান্না মিয়ার সমর্থকেরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এরপর নান্না মিয়া বৈঠাকাটা বাজারে তাঁর নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।

আলাউদ্দিন বাহাদুর ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নান্না মিয়া সাধারণ সম্পাদক।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নান্না মিয়া অভিযোগ করেন, কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বাছাইয়ের জন্য তৃণমূলের ২০টি ভোটের মধ্যে নান্না মিয়া ১১ ভোট পান। কিন্তু মাত্র তিন ভোট পাওয়ার পরও দলীয় মনোনয়ন পান আলাউদ্দিন বাহাদুর। দলের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অনুরোধে নান্না মিয়া প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর ছয়জন প্রার্থী শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলাউদ্দীন বাহাদুরের ছেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) আনিসউদ্দিন বাহাদুর এলাকায় এসে মোটরসাইকেলে মহড়া দেন। গত শনিবার দুপুরে আনিসউদ্দিন বাহাদুরের নির্দেশে অর্ধশত যুবক ২৫ থেকে ৩০টি মোটরসাইকেল নিয়ে কোকরাকাঠি, চাঁদকাঠি ও খলনী এলাকায় নান্না মিয়ার তিনটি নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করেন। এ সময় আলাউদ্দিন বাহাদুরের কর্মীদের হাতে নান্না মিয়ার সমর্থক কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন গাউস, উপজেলা যুবলীগের সহসম্পাদক জাহিদ হোসেন, ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুল ইসলামসহ অন্তত ১২ জন আহত হন। গতকাল রোববার ভোরে বহিরাগত দুর্বৃত্তরা নান্না মিয়ার সমর্থক মুনিরাবাদ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আউয়াল ও কোকরাকাঠি গ্রামের শিক্ষক মনিরুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারধর করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় আবদুল আউয়ালকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার চেষ্টা করা হলে দুর্বত্তরা বাধা দেয়। আনিসউদ্দিন বাহাদুর পুলিশের একজন কর্মকর্তা হয়েও নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেলে মহড়া দিয়ে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। আনিসউদ্দিন বাহাদুর এলাকায় থেকে প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার ও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী নান্না মিয়ার সমর্থক ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন এবং মারধর করছেন। এতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আহত আবদুল আউয়ালের স্ত্রী লুৎফুন্নেছা অভিযোগ করেন, ভোর ছয়টার দিকে আবদুল আউয়ালকে বাড়ি থেকে তুলে নিতে মারধর করে সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীদের বাধায় আউয়ালকে হাসপাতালে না নিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আনিসউদ্দিন বাহাদুর বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। হামলা ও ভাঙচুরের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমার বাবার নির্বাচন উপলক্ষে ছুটিতে বাড়ি এসেছি।’

নাজিরপুর থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি।’

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৬ এপ্রিল পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া, দেউলবাড়ি দোবরা ও শ্রীরামকাঠি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।