বুড়ি তিস্তা বাঁচাতে মানুষের ঢল

কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রখর রোদ ও গরম উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার নারী–পুরুষ পাত্রে পানি এনে বুড়ি তিস্তায় ঢেলে নদীতে পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। এ সময় তারা ‘বুড়ি তিস্তা বাঁচাও/ উলিপুর বাঁচাও’ স্লোগানে চারদিক মুখর করে তোলে। ছবিটি গতকাল তোলা l প্রথম আলো
কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রখর রোদ ও গরম উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার নারী–পুরুষ পাত্রে পানি এনে বুড়ি তিস্তায় ঢেলে নদীতে পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। এ সময় তারা ‘বুড়ি তিস্তা বাঁচাও/ উলিপুর বাঁচাও’ স্লোগানে চারদিক মুখর করে তোলে। ছবিটি গতকাল তোলা l প্রথম আলো

উলিপুরে বুড়ি তিস্তা নদী বাঁচাও আন্দোলনের প্রতীকী কর্মসূচিতে অংশ নিতে মানুষের ঢল নামে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে শত শত মানুষ বুড়ি তিস্তা নদীতে পানি ঢেলে এ প্রতীকী কর্মসূচিতে যোগ দেয়। এ সময় তারা দখলদারদের হাত থেকে নদী রক্ষা, পানিপ্রবাহ বাধামুক্ত করা ও উৎসমুখে স্লুইসগেট নির্মাণের দাবি জানায়।

প্রখর রোদ ও গরম উপেক্ষা করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, স্থানীয় নারী ও পুরুষ কলস, বালতি, ঘটি, জগ, মগ ও বোতলে পানি নিয়ে এসে বুড়ি তিস্তায় ঢেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানায়। এ সময় তারা স্লোগান দেয় ‘বুড়ি তিস্তা বাঁচাও, উলিপুর বাঁচাও’।

গতকাল সকাল ১০টায় উলিপুর প্রেসক্লাব ও রেল, নৌ–যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি আয়োজিত এ কর্মসূচি উপলক্ষে উলিপুর শহীদ মিনার চত্বরে উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, স্কুল, কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সহস্রাধিক মানুষ সমবেত হয়। শহরের প্রধান প্রধান মোড়ে বসানো মাইকে স্লোগান তোলার সঙ্গে সঙ্গে সবার মুখে একই দাবি উচ্চারিত হতে থাকে, ‘দখলদার নিপাত যাক/বুড়ি তিস্তা রক্ষা পাক’, ‘বুড়ি তিস্তা বাঁচলে/ উলিপুর বাঁচবে’।

এরপর শহীদ মিনার থেকে কলস ঘটি-বাটি, পানির বোতলে পানি নিয়ে ঈদগাহ মাঠের পাশ দিয়ে পোস্ট অফিস মোড় হয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ শোভাযাত্রা শহরের প্রধান সড়ক অতিক্রম করে গুনাইগাছ সেতুর পূর্ব দিকে বুড়ি তিস্তা নদীর তীরে পৌঁছায়। লোকজন নদীর দুই তীরে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান নেয়। এ প্রতীকী কর্মসূচি উপলক্ষে সকাল থেকেই নদীপারে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী গণসংগীত ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে। মিছিল বেলা ১১টার দিকে নদীর তীরে পৌঁছালে সমাবেশ শুরু হয়। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে সাইরেন বাজিয়ে সংকেত দিলে একযোগে ঘটি-বাটি, কলস, বোতলের পানি বুড়ি তিস্তায় ঢালে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া প্রতিবাদী মানুষের দল।

এ সময় সমাবেশে বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ হোসেন তালুকদার, উলিপুর পৌর মেয়র তারিক আবুল আলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতি শিউলী, সাবেক সভাপতি আবদুল মজিদ হাড়ি, সাধারণ সম্পাদক গোলাম হোসেন, উলিপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি পরিমল মজুমদার, উলিপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু সাঈদ সরকার, কমিউনিস্ট পার্টির নেতা দেলওয়ার হোসেন, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাহমিনা বেগম প্রমুখ।

বক্তারা বুড়ি তিস্তায় তিস্তা নদীর উৎসমুখে স্লুইসগেট নির্মাণ, নদী পুনঃখননসহ অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানান। তা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন তাঁরা। এরই মধ্যে বুড়ি তিস্তা রক্ষার দাবি এলাকাবাসীর সর্বজনীন দাবিতে পরিণত হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে গত ১৩ মার্চ মানববন্ধন ও ২১ মার্চ সাইকেল শোভাযাত্রায় শত শত মানুষ অংশ নেয়। এ ছাড়া প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বুড়ি তিস্তা বাঁচাতে মিছিল-মিটিং ও পথনাটক পরিবেশিত হচ্ছে।

উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ বুড়ি তিস্তা নদীতে পানিপ্রবাহ কমে নদীটি ধীরে ধীরে মরে যেতে শুরু করে। এ সুযোগে একশ্রেণির দখলদার অবৈধ পাকা স্থাপনা, ঘরবাড়ি, বিপণিবিতান, কোচিং সেন্টার নির্মাণ করে নদীর পানিপ্রবাহ আরও বন্ধ করে দেয়। ফলে বুড়ি তিস্তা নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে।